ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জামিনে মুক্ত চকবাজারের কাউন্সিলর পদে জয়ী টিনু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
জামিনে মুক্ত চকবাজারের কাউন্সিলর পদে জয়ী টিনু জামিনে মুক্ত নূর মোস্তফা টিনু

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আলোচিত কিশোর গ্যাং লিডার ও চসিকের চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে জয়ী নূর মোস্তফা টিনু। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জামিনের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন ৪র্থ যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোরশেদুর রহমান।

কারাগার সূত্র জানা যায়, বিকেল ৪টার দিকে জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কারাগার থেকে টিনুকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন জামিন দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে জামিনের কাগজপত্র ৪র্থ যুগ্ম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়। জামিন মঞ্জুরের আদেশের পক্ষে টিনুর আইনজীবী আদালতে জামিননামা দাখিল করেন। আদালতের জামিন মঞ্জুরের কপি দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপ-নির্বাচনে ৭৮৯ ভোট পেয়ে মিষ্টিকুমড়া প্রতীকে নূর মোস্তফা টিনু জয়ী হয়েছেন।  

নগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে টিনু গ্রুপের সদস্যরা। সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ কেউই রেহাই পাননি এ গ্রুপের হামলা থেকে।
নগরের চকবাজার এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন টিনু।  নগরজুড়ে বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততা রয়েছে গ্রুপটির। এ গ্রুপের দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা গড়ে তুলেছে ডজনখানেক উপগ্রুপ। এসব গ্রুপ ও উপগ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তথাকথিত যুবলীগ নেতা টিনু। টিনুর পৃষ্ঠপোষকতায় ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে কয়েকটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছেন টিনুর ছোট ভাই চকবাজার থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম শিপু, চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ইভান, মেডিক্যাল এলাকার রবিউল ইসলাম রাজু, পুরাতন চারতলা এলাকার সানিসহ ২০ জন। তাদের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টিনুর পক্ষে চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, বাকলিয়াসহ টিনুর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কোচিং সেন্টার, নির্মাণাধীন ভবন, বাজার, ফুটপাত, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে সাদ্দাম হোসেন ইভান, রবিউল হোসেন রাজু, কায়সার হামিদ এবং র‌্যাবের হাতে টিনুর সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া জসিম উদ্দিন ওরফে বাইক জসিম। এদের মধ্যে অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ন্ত্রণে গুরু দায়িত্ব পালনের জন্য ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে বিশেষ পরিচিতি আছে সাদ্দাম হোসেন ইভান, রিফাত ও রাজুর।

২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় নগরের কাপাসগোলা এলাকা থেকে টিনুকে একটি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে র‌্যাব। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কলেজে আধিপত্য বিস্তার ও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন নুর মোস্তফা টিনু। সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। অস্ত্র আইনে মামলা করে টিনুকে নগরের পাঁচলাইশ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর টিনুকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ২০০৩ সালে অত্যাধুনিক একে-২২ অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়ে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন টিনু। সেই মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছিলেন তিনি।

এক বছর চার মাস এই মামলায় কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান টিনু। সর্বশেষ ২০ জুন র‍্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের মামলায় নুর মোস্তফা টিনুর জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ৪র্থ চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক আফরোজা জেসমিন কলি। গত ২৩ মে অস্ত্র মামলায় টিনুর জামিন বাতিল করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।  

২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক হওয়া চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি শিপুকে ছাড়াতে চকবাজার থানার সামনে প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ করেছিল টিনুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১ 
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।