ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে দেড় লাখ ভবন ঝুঁকিতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
চট্টগ্রামে দেড় লাখ ভবন ঝুঁকিতে বক্তব্য দেন ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

চট্টগ্রাম: নগরের ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) গবেষণা সেল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কনফারেন্স হলে আয়োজিত ভূমিকম্প সচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধিতে সরকার জিরো ইন্টারেস্টে লোন দিতে পারে। তাহলে খুব দ্রুত তারা ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে পারবে।

 

ঝুঁকিতে সাড়ে ৭শ স্কুল  

ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরের ১ হাজার ৩৩টি স্কুলের মধ্যে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে ৭৪০টি। এছাড়াও অনেক স্কুল টেকসই নয়। এসব স্কুলকে টেকসই করতে খুব শিগগিরই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল-কলেজের টেবিলগুলো টেকসই করতে হবে, যাতে ভূমিকম্পে সেগুলোকে কাজে লাগানো যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টেবিলগুলো কেমন হবে, তার একটি বর্ণনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও স্কুলে সেটির প্রতিফলন দেখতে পাইনি।

তিনি বলেন, অনেক ভবনের নিচ তলার পিলার ভেঙে সমান করে প্রাইভেট বা ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল তৈরি হচ্ছে। যেগুলো ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। শিক্ষক-অভিভাবকরা সচেতন হলে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।  

মহেশখালী-মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালী-মাতারবাড়ির উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিক পদ্ধতিতে হওয়ার জন্য আলাদা দফতর খোলার দির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সেখানে টেকসই উন্নয়ন হয়। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে হয়। যেহেতু সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে সেহেতু ভবনগুলো নির্মাণেও আগেভাগে ভূমিকম্প প্রতিরোধক সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কক্সবাজারের যে ভবন আর হোটেল নির্মিত হয়েছে সেগুলোর বালি-মাটির আধিক্য বেশি। তাই সেগুলোতে ঝুঁকিও বেশি। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  

ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০৪১ সালের যে ভিশন সে লক্ষ্যে যদি আমরা পৌঁছাতে চাই অবশ্যই আমাদের এখন থেকে পরিকল্পনা নিতে হবে। ভূমিকম্প রোধে নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে যদি সরাতে হয় তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যদি সরাতে না হয় তাহলে শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বাড়িগুলো নির্মিত হচ্ছে সেগুলো কাঠ-বাঁশ দিয়ে তৈরি করতে হবে। এখন আমরা দেখত পাই, সেখানেও উঁচু-উঁচু বিল্ডিং হচ্ছে। যেগুলো ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ। মহেশখালী আর মাতারবাড়ির উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আমাদের আধুনিক রাষ্ট্রের হাতছানি দিচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মহেশখালী ও মাতারবাড়ি সিঙ্গাপুর হবে। তাই সেখানে ভূমিকম্পে রোধে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।  

কর্ণফুলী নদীর পাশের ভবনগুলোও ঝুঁকিতে

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প প্রকৌশল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যে উঠে এসেছে, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে যে বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে সেগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আমাদের আগে থেকে সতর্ক হতে হবে। সেখানকার প্রত্যেকটি বিল্ডিং দেখে দেখে ঠিক করতে হবে। সেই সঙ্গে টেকসই ভবন নির্মাণ করতে হবে। বিল্ডিং কোড ফলো করতে হবে। নির্মাণ রীতি অনুসরণ করতে হবে।

চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকার রাস্তাগুলো অনেক ছোট। ভূমিকম্পে কোনও ভবন হেলে পড়লে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারবে না। নগরের প্রত্যেকটা দফতরকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেমন: বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে সেখানে সিল মেরে দিবে। আপনার ভবন ভূমিকম্পে ঝুঁকিমুক্ত তো? একইভাবে পানি আর গ্যাস বিল দিতে গেলেও সেখানে এভাবে সিল মেরে দিবে। একদিন সে সচেতন না হোক পরের দিন তো হবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে। কোনও ভবন অনুমোদন দিয়েই দায় সারলে হবে না। ভবনটির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকি করতে হবে৷ এখন ৫ তলা ভবন অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা ভবন নির্মাণ করে। সেদিকে আর কোনও খবর থাকে না। ভূমিকম্প হলে সেগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়াও বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সড়কের পাহাড়গুলো সোজা কাটা হয়েছে। সেগুলোতে স্লোব তৈরি করে দিতে হবে। না হয় সেগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।

তার মতে, গ্রামের বাড়িগুলো তৈরিতেও সতর্ক থাকতে হবে। মাটির দেওয়াল নির্মাণের সময় দুইপাশে বাঁশ দিতে হবে। দেওয়ালের মাঝখানে বাঁশ দিতে হবে। যাতে ভূমিকম্পে দেওয়াল ধসে পড়লেও টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এতে মানুষের মৃত্যুঝুঁকি কমবে। তবে, আগের বিল্ডিংয়ের চেয়ে নতুন যে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেগুলো ঝুঁকিতে। কারণ এখন সবকিছুতে ভেজাল। কম দিয়ে অধিক লাভ করতে চাই। আগের মানুষগুলো তো এসব চিন্তা করতো না। তারা ভালো জিনিস দিয়েই ভবন নির্মাণ করতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।