ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাইলেজ নিয়ে চালকদের ক্ষোভ, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
মাইলেজ নিয়ে চালকদের ক্ষোভ, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: মাইলেজ ইস্যুতে সারা দেশে ট্রেন চালকদের (লোকোমাস্টার) মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলনে করছেন তারা।

এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।  

শুধু সশরীরে আন্দোলনে নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে সমালোচনার ঝড়।

প্রতিনিয়তই রেলওয়ে সম্পর্কিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিচ্ছেন তারা। সেখানে আবার রেলওয়ে লোকোমাস্টাররা কমেন্ট করছেন তাদের দাবি নিয়ে।  

গত ৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে ট্রেন নিয়ে এসে চট্টগ্রাম স্টেশনে বসে নিজের ফেইসবুক ওয়ালে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আব্দুল আওয়াল রানা নামের এক লোকোস্টার। যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে তার সহকর্মীরাও কমেন্ট বক্সে তাদের আবেগের কথা জানান।  

গত ২৮-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে তাদের বেতন দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। গত ৩০ নভেম্বর লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ব্যানারে বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলীর কাছে নিয়মিত বেতন বিল দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। বিক্ষোভ করেছেন রেলওয়ের বিভিন্ন দফতরে সামনে।

জানা গেছে, রেলওয়ের সংস্থাপন কোডের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক রানিং স্টাফ এবং লোকোমোটিভ রানিং স্টাফদের ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ভিত্তিতে রানিং অ্যালাউন্স দেওয়ার প্রস্তাব হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানিং স্টাফদের বিশেষ এ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ভাতা সীমিত হয়ে যাওয়ার ঘোষণা মানছেন না রানিং স্টাফরা।

রেলওয়ের রানিং কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনচালক (লোকোমাষ্টার) গার্ড (ট্রেন পরিচালক), টিটিই (ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার)। সম্প্রতি মহামান্য আদালতের রায়ে মাইলেজ অধিকারপ্রাপ্ত হয়েছেন ক্যারেজ অ্যাটেন্ডেন্টরাও।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান মজিব বাংলানিউজকে বলেন, রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রেলওয়ে রানিং স্টাফরা মাইলেজ পাচ্ছেন। রেলওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন তারা। হঠাৎ করে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে আমাদের বেতন-ভাতা সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়মে নির্ধারিত সময়ের পর কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেবেন। এতে বিঘ্ন হতে পারে রেলের স্বাভাবিক চলাচল।  

বাংলাদেশ শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে রেলওয়ে রানিং কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়েতে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে যা অর্থ মন্ত্রণালয় উপলব্ধি করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন দেওয়ার আগে আরো দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক আব্দুল বারি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কষ্ট করি সে কষ্টের মূল্যায়ন আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে গেছেন। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশরত্ন শেখ হাসিনা দিচ্ছেন।  

মাইলেজ হলো 'পার্ট অব পে'। কাজ করলেই পাই। না করলে পাই না। এটি ব্রিটিশ আমল থেকে চালু। একজন রানিং কর্মচারী রেলওয়ে স্টাবলিশমেন্ট কোড ভলিয়ম-১ এর চ্যাপ্টার-৫ এবং লোকোমোটিভ অ্যান্ড রানিং শেড ম্যানুয়াল জিআই চ্যাপ্টার-১২ অনুযায়ী ১০০ মাইল বা প্রতি ৮ ঘণ্টা ট্রেন পরিচালনার জন্য এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ প্রাপ্য হবেন। সাপ্তাহিক ও সরকারি যে কোনো বন্ধের দিনে ডিউটি করলে ‘হলিডে মাইলেজ’ প্রাপ্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ অর্থমন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমরা বিব্রত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।