চট্টগ্রাম: প্রথম দেখাতে যে কারো মনে হবে এটি হাতের কারুকাজে তৈরি বিখ্যাত এক ট্রফি। কিন্তু এটি ট্রফি নয়, কেক।
কেকের উপরে গোল করে নীলের মাঝে সাদা অক্ষরে লেখা ‘লায়ন ক্লাব অব চিটাগং তিলোত্তমা’।
হরেক রকম স্বাদের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কেকটি। কেকটি তৈরি করা হয়েছে লায়ন্স ক্লাব চিটাগং তিলোত্তমা কর্তৃক আয়োজিত অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য।
কেকটি সাড়ে ৮ কেজি ওজনের, প্রায় ১৭ পাউন্ডের। তৈরি করতে সময় লেগেছে দুই দিন। তাতে কী? উপস্থিত হাজারো লায়ন্সদের মাঝে সবুজায়নের বার্তা দেওয়ার জন্য এ উপহারটাই যেন তার সব সার্থকতা।
কেকটি তৈরি করেছেন সাকিয়া সুলতানা। পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ছাত্রজীবন থেকেই ইচ্ছে নতুন কিছু করার, নতুন নতুন ধারণার জন্ম দেওয়া। নতুন কিছু তৈরি করে যেন আজ সে সফল। কেক তৈরির দারুণ এক শিল্পী তিনি। নিয়েছেন দেশবিদেশের বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ।
নানা দেশের কেক আর্টিস্টদের কাছে কেক নিয়ে টানা দুই বছর বিভিন্ন কোর্স করেছেন সাকিয়া সুলতানা। তিনি মালয়েশিয়ার উইলটন ইনস্টিটিউট থেকে 'উইলটন ইউ এস এ' এর তিনটি কোর্স করেছেন। কানাডার 'রোসালিন চেঙ্গ' , অস্ট্রেলিয়ার 'সেরন উই' , ইউরোপের 'কার্লা পুজ্', ফ্লাওয়ার কিং 'এলেন ডান্' ,মালেশিয়ার 'বিনি ফং' ও সর্বশেষ বিশ্বের সেরা পেস্ট্রি শেফ 'আন্হানিও বাচুর'এর কাছে কাজ শিখেছেন।
২০১৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয় সাকিয়ার। সপ্তাহে ৫-৬টি কেকের অর্ডার পান তিনি। যে কেকগুলো তিনি তৈরি করেন সেগুলোর বেশিরভাগ উপাদানই আসে বিদেশ থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালাইমনাই অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জন্য আরেকটি কেক বানিয়ে তিনি সারা দেশে সাড়া জাগিয়েছে ছিলেন।
‘মানবতার সেবাই মানবতা’ এ লক্ষ্যে গত ২৭ নভেম্বর 'লায়ন ক্লাব অব চিটাগাং তিলোত্তমা'র অভিষেক হয়। কিন্তু তিন মাস আগে থেকেই সেবামূলক কাজ শুরু করেন তারা।
অনুষ্ঠানে নতুন লায়ন্সদের বর্তমান গভর্নর লায়ন আল সাদাত দোভাষের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে শপথ গ্রহণ, পিন এবং ক্রেস্ট দেওয়া হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে লায়ন এমএ মালেক, লায়ন কামরুন মালেক, লায়ন মন্জুরুল আলম মন্জু উপস্থিত ছিলেন।
তিলোত্তমা ক্লাবে প্রতিষ্ঠাতা লায়ন সাহেলা আবেদীন সবুজ চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সিআরবির বৃক্ষনিধনরোধে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিলোত্তমা নামটির সঙ্গে সবুজায়ন বা গাছপালার একটা সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। আর তাই 'লায়ন ক্লাব অব চিটাগাং তিলোত্তমা' ক্লাবের প্রথম অনুষ্ঠানেই কেকের মাধ্যমে সবুজায়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এ কেকটি তৈরি করেছেন লায়ন সাকিয়া সুলতানা।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে কেকের বিষয়টা যখন আসে, তখন আমি গতানুগতিক কেক না বানিয়ে ক্লাবের নামটি যে ক্লাব থেকে এসেছে, যার হাত ধরে ক্লাবটির পথ চলা শুরু, সেই তিলোত্তমাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। কতটুকু পেরেছি জানি না। তবে গাছ, সোনালি পাতা, অর্কিড এগুলো চির সবুজ সতেজ তিলোত্তমার প্রতীক বলেই মনে হয়। আমাদের মনের সতেজতা দিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ লায়নিজমকে এগিয়ে নেব এই প্রত্যয় থেকেই এই ভিন্নধর্মী কেক তৈরি করেছি। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জোন চেয়ারপারসন শাহেলা আবেদীন আপাকে অনেক ধন্যবাদ।
ক্লাব প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ট্রেজারার এবং মেম্বার সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আসলে কারো একার ইচ্ছায়, চেষ্টায় কোনো কিছু এত সুচারুরূপে করা সম্ভব নয়। আমি লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং তিলোত্তমা' র প্রথম জয়েন্ট- ট্রেজারার হতে পেরে আনন্দিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২১
বিই/টিসি