ঢাকা, শনিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চমেক হাসপাতালে বেপরোয়া আনসার, অসহায় রোগী-স্বজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
চমেক হাসপাতালে বেপরোয়া আনসার, অসহায় রোগী-স্বজন ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: ঘুষ, চাঁদাবাজি কিংবা রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা- সব অপরাধের অগ্রভাগেই যেন আনসার সদস্যরা। বাহিনীটির প্রধান দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও তা এখন গৌণ দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনসার সদস্যদের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ঠ চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। বিভিন্ন ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোনও শাস্তি না হওয়ায় তাদের মারমুখি আচরণ বন্ধ হচ্ছে না ।

 
 
জানা গেছে, চলতি বছরে ছোট-বড় কমপক্ষে প্রায় ৫-৬টি ঘটনায় জড়িয়েছে চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) ঘুষ না দেওয়ায় রোগীর দুই স্বজনকে মারধর করে আনসার সদস্যরা। এর আগে চলতি বছরের ২৭ মার্চ রাতে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুই আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে। এছাড়াও হরহামেশা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় আনসার সদস্যরা।  

অন্যদিকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্যরা পার্কিং এলাকায় আসা অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে আদায় করে ইচ্ছামাফিক চাঁদা।  

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বাংলানিউজকে বলেন, প্রধান গেইট থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে প্রবেশ করা পর্যন্ত পদে পদে আনসার সদস্যদের হয়রানির সম্মুখিন হতে হয়। রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় কোনও কিছু নিয়ে গেলেও তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। ১০-২০ টাকা না দিলে রোগীর কাছে যেতেই দেওয়া হয় না।

মো. হাফিজুল ইসলাম নামে রোগীর সন্তান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা গত চারদিন ধরে হাসপাতালের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। যতবারই ওয়ার্ডে ঢুকার চেষ্টা করেছি, ততবারই আনসার সদস্যের বাধার মুখে পড়েছি। আমার বাবাকে দেখার জন্য অনেক আত্মীয়-স্বজন আসছেন। তাদেরও ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় না তারা। শেষ পর্যন্ত টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে’।  

তিনি বলেন, শুধু আনসার সদস্য নয়- হাসপাতালের আয়া ও ওয়ার্ডবয়রাও টাকা ছাড়া কোনও কাজ করে না। এমনকি রোগীকে নিয়ে কোনও টেস্ট করাতে যেতে হলে হুইল চেয়ার বা ট্রলির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রেও তা ম্যানেজ করতে হয় টাকা দিয়ে। অথচ হাসপাতালে হুইল চেয়ার ও ট্রলি রাখা হয়েছে রোগীর সুবিধার্থে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য।  

আনসার সদস্যদের এমন দৌরাত্ম্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানলেও তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না।  

এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আফতাবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আনসার সদস্যরা কোনও অপরাধ করলে শাস্তিস্বরূপ তাদের প্রত্যাহার করা হয়। কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের থাকে না। তবে আমরা বিষয়গুলো আনসার দফতরে অবহিত করি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
 
তিনি আরও বলেন, এত বড় হাসপাতালে দুইশ থেকে আড়াইশ জনের মতো আনসার সদস্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের লোকবল সে তুলনায় কম। অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে এত মানুষকে সামাল দেওয়া যায় না। তাই মাঝে মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে।  

সর্বশেষ রোগীর স্বজনদের মারধরের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। মেডিসিন বিভাগের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।  

চমেক হাসপাতালের আনসার কমান্ডার মো. খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক এবং আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এতে যদি আনসার সদস্য দোষী হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাকরি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।