ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দিনে ৫ টন মেডিক্যাল বর্জ্য পোড়াবে চসিক 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
দিনে ৫ টন মেডিক্যাল বর্জ্য পোড়াবে চসিক 

চট্টগ্রাম: ইনসিনেটর প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, সংক্রামক মেডিক্যাল বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্ব দিয়ে ইনসিনেটর প্লান্ট বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দৈনিক ৫ টন মেডিক্যাল বর্জ্য ধ্বংস করা যাবে।

এটি একটি পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক ব্যবস্থা।  

এ ধরণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন নেই।

উন্নত শহরগুলোকে অনুসরণ করলেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব।  

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) আনন্দবাজার টিজিতে জাইকার অর্থায়নে ও চসিকের উদ্যোগে স্থাপিত ইনসিনেটর প্লান্টের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল, ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোকে তাদের মেডিক্যাল বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুসরণ করে অটোক্লেভ মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দেওয়ার আহ্বান জানান।  

চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে ও প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানর বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, যুগ্ম সচিব সবুর হোসেন, জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হাইয়াকাওয়া ইয়োহো, সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ সাইকি তাকাশি, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, মো. ইলিয়াস, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ।

মেয়র বলেন, করোনার এই সময়ে যেভাবে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে তাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও শিল্প বর্জ্যের কিছু অংশ ভাগাড়ে এবং কিছু নালা-নর্দমার মাধ্যমে নদী-সমুদ্রে গিয়ে পড়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।  

তিনি মেডিক্যাল বর্জ্যের পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য ও ইলেকট্রনিকবর্জ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং এ ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে নগরের সেবা সংস্থাগুলোকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।  

তিনি বলেন, প্লান্টটিতে মেডিক্যাল বর্জ্য পোড়ানো হবে পরিবেশ সম্মত উপায়ে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে অন্যদিকে সংগৃহীত মেডিক্যাল বর্জ্যের কারণে যে সংক্রামক রোগ ছড়ায় তাও অনেকাংশে কমবে। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে চসিক অনুমোদিত মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহকারী ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’কে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহ, পরিবহন এবং বিশোধনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চসিককে বর্জ্য বিশোধনের চার্জ দিয়ে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা মেডিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসে এই প্লান্টটি ব্যবহার করবে। জাইকার ৩ কোটি টাকা ও চসিকের ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্লান্টটি স্থাপন করা হয়েছে।  

তিনি জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ জাইকার প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ। তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। চসিকের সঙ্গে জাইকার যে উন্নয়ন কাজগুলো চলছে তা অব্যাহত রাখবেন বলে মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি নগর। এ নগরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। এ নগরের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম জাপান সফর করে জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ক আজ অবধি অব্যাহত আছে। জাপান চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক সহযোগিতা দিয়েছে। সেই সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।  

তিনি ইনসিনেটর স্থাপনে জাইকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনায়নে এই প্লান্টটি যথেষ্ট অবদান রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০৪১’সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বমাঝে আবির্ভূত হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী বলেন, নগরীর মেডিক্যাল বর্জ্য বিশোধনে চসিকই দেশে প্রথম ইনসিনেটর প্লান্ট স্থাপন করল যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিনন্দনযোগ্য একটি প্রয়াস।

 আগামীতে চট্টগ্রাম একটি পরিবেশবান্ধব নগর হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হাইয়াকাওয়া ইয়োহো বলেন, জাইকার মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপিত ইনসিনেটর প্লান্ট পরিবেশ সম্মত উপায়ে ধোঁয়াবিহীন চুল্লির মাধ্যমে বর্জ্য বিশোধন করবে। উচ্চ তাপমাত্রায় এই বর্জ্য বিশোধন করা হবে। এই প্লান্টটি পরিচালনা করতে জাইকার বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে এবং চসিক সেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।


বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
এআর/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।