ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের ওমিক্রন শনাক্ত হয় ঢাকায়!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
চট্টগ্রামের ওমিক্রন শনাক্ত হয় ঢাকায়! ...

চট্টগ্রাম: নতুন বছরের শুরুতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। তবে আক্রান্তরা নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কি-না, তা জানার সুযোগ নেই।

বর্তমানে চট্টগ্রামে অ্যান্টিজেন টেস্ট সহ ১৪টি ল্যাব এবং শাহ আমানত বিমানবন্দর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।  

এসব ল্যাবে করোনা শনাক্ত করা গেলেও একের পর এক সৃষ্টি হওয়া ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত করা সম্ভব নয় বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

যদি চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা যেত, তাহলে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হতো বলে মত চিকিৎসকদের।  

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি করছে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের। দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া করোনার এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে।

মূলত, রোগীর ওমিক্রন শনাক্ত করতে হলে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হয়। বর্তমানে ওমিক্রন সন্দেহ হলে রোগীর নমুনা পাঠাতে হচ্ছে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব অ্যাপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ-এ (আইইডিসিআর)। কিন্তু ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘসময়। অথচ জিনোম সিকোয়েন্স  করা গেলে চট্টগ্রামে  ওমিক্রন আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করা যেত।

এ অবস্থায় করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। তবে বিভিন্ন জটিলতায় ওমিক্রন শনাক্তে কাজ করতে পারছেন না বলে জানান চট্টগ্রামের গবেষকরা।

তারা বলছেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ কোন পর্যায়ে- তা জানতে হলে অবশ্যই জিনোম সিকোয়েন্স করা প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল। অর্থের যোগান নিশ্চিত না হলে গবেষণা কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) করোনা ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ওমিক্রন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি মাত্র। বেশ কিছু নমুনা ঢাকায় পাঠিয়েছি। সিকোয়েন্সিং করা হলে জানা যাবে চট্টগ্রামে ওমিক্রনের অবস্থা।  

তিনি বলেন, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও জানি না করোনার কোন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। বলতে গেলে আমরা এখনও অন্ধকারে আছি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। সরকারি হাসপাতালেও উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছে।

এদিকে, নতুন করে সংক্রমণ শুরুর আগে চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিল ওমিক্রন শনাক্ত উপযোগী কিট আনা হয়েছে। সিভাসু করোনা ল্যাবের প্রধান এবং প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের শিক্ষক শারমিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এতদিন নমুনা কম থাকায় আমরা কাজ করতে পারিনি। বেশ কিছুদিন নমুনার অভাবে ল্যাবও বন্ধ রাখতে হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।  

তিনি বলেন, আমাদের ল্যাবে বিশেষ কিছু কিট আনা হয়েছে। তা দিয়ে টেস্ট করলে আমরা হয়তো ওমিক্রনের ব্যাপারে ধারণা দিতে পারবো। তবে অবশ্যই তা শতভাগ নয়। রোগীর শরীরে ওমিক্রনের সংক্রমণ আছে কি-না জানতে হলে অবশ্যই সিকোয়েন্সিংয়ের প্রয়োজন।  

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ও ল্যাব প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে করোনার নমুনা পাওয়ার পর এটি পজেটিভ-নেগেটিভ পরীক্ষা করে দেওয়া। কিন্তু পজেটিভ হলে এটি কোন জাতের তা আমরা জানতে পারি না। কারণ আমাদের কোনও সিকোয়েন্সিং মেশিন নেই। সক্ষমতা থাকলেও আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সবকিছু করতে পারি না।

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের প্রধান ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, যে ভ্যারিয়েন্টেই সংক্রমণ ছড়াক, আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগীর সিভিয়ারিটি বেড়ে গেলে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়। করোনা নিয়ে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত আছি। তবে ওমিক্রনের চরিত্র, মিউটেশনসহ বিভিন্ন দিক জানতে পারলে আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানা যেত। এছাড়া আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা সম্ভব হতো।  

প্রসঙ্গত, গত ১৩ দিনে চট্টগ্রামে আক্রান্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ জন। যা গত মাসের সংক্রমণের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয় ২৬০ জন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব, বিআইটিআইডি ল্যাব, চমেক ল্যাব, সিভাসু ল্যাব, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাব, শেভরন ল্যাব, মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাব, আরটিআরএল ল্যাব, মেডিক্যাল সেন্টার ল্যাব, ইপিক হেলথ কেয়ার ল্যাব, ল্যাব এইড ল্যাব, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ল্যাব, এশিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।  

চিকিৎসকরা জানান, ওমিক্রনে যে নতুন লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে আছে-ক্লান্তিবোধ, খসখসে গলায় কথা বলা, হালকা জ্বর, রাতে ঘাম এবং শরীরে ব্যথা, শুকনো কাশি। ওমিক্রনে গন্ধ বা স্বাদ হারানোর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে এতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ারও কোনও ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।