ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভবন নির্মাণ নিয়ে মুখোমুখি জেলা প্রশাসন-আইনজীবী সমিতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
ভবন নির্মাণ নিয়ে মুখোমুখি জেলা প্রশাসন-আইনজীবী সমিতি ...

চট্টগ্রাম: সরকারি জায়গায় গাছ কর্তন নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন ও জেলা আইনজীবী সমিতি।  

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কোর্ট হিলের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত টিলা শ্রেণির সরকারি জায়গায় গাছ কাটার কারণে ৪ শ্রমিককে আটক করে পুলিশ।

পরে সে জায়গায় চতুর্দিকে টিন দিয়ে ঘেরা দেওয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি সেখানে আবারও শ্রমিক দিয়ে গাছের গোড়ালি অপসারণ করে ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা পরিষ্কার করা হয়।
এ নিয়ে পুরনো দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

কোর্ট হিলের খোলা জায়গায় কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে এবং আদালত ভবনের নাম পরিবর্তন না করতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ৮ ফেব্রুয়ারি জাস্টিস ডিমান্ড নোটিশ পাঠিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ঐতিহাসিক আদালতে ভবনের সামনে খালি জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার গাড়ি রাখার পার্কিং নির্মাণ, ফুলের টব ও অপরিকল্পিত বাগান স্থাপন করে খোলা স্থানটি সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে সংকুচিত রাস্তা দিয়ে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ ও প্রশাসনিক কাজে আসা লোকজনের যাতায়াত ও পূর্বের ন্যায় গাড়ি রাখায় চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ব্রিটিশ সরকার জমিদার অখিল চন্দ্র সেন থেকে কোর্ট হিলটি হুকুম দখল করেছিল আদালত ভবন নির্মাণের জন্য। আদালত ভবন বা তার সামনের খালি জায়গা গণচলাচলের রাস্তা। একমুখী রাস্তা দিয়ে আদালত ভবন হতে বের হতে হয়। এমন অবস্থায় কোনোভাবেই জনগণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যায় না।

এদিকে কোর্ট হিলের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত-অনুমোদনহীন স্থাপনাসমূহ অপসারণের জন্য সরকারি ২৫টি দফতর থেকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে।  

সরকারি দফতরগুলো হলো- মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা চট্টগ্রাম, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৯, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পুলিশ অধিদফতর।

সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা এবং সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন স্থাপনাসমূহ অপসারণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দানের জন্য অনুরোধ করা হলো। ভূমি মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোনও সংস্থার অনুমোদন ব্যাতিত ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরিকল্পিত অবৈধ স্থাপনা তৈরি নিষিদ্ধকরণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দানের জন্য অনুরোধ করা হলো।  

‘ভূমি মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম কোর্ট হিল এলাকায় সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় শ্রেণির জমিতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি যেন পুনরায় অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি দখল না করতে পারে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ ও ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নের আশঙ্কা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দানের জন্য অনুরোধ করা হলো। কোর্ট হিল এলাকায় সরকারি ভবন ও স্থাপনাসমূহ ব্যতীত জেলা প্রশাসকের অনুমোদনপত্র ছাড়া কোনও প্রকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান না করার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকেও অনুরোধ করা হয়’।

জানা গেছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাহাড়টি রক্ষা সংক্রান্ত  প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী তাতে সায় দেন। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এই অনুশাসন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাতেও বলা হয়।

এ অবস্থায় কোর্ট হিলের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় গত ৩১ জানুয়ারি ‘একুশে ভবন’ নামে একটি স্থাপনা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে আইনজীবী সমিতি। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি হিলটপ রেস্টুরেন্টের সামনে ১৫-২০ জন শ্রমিক একটি জায়গা টিন দিয়ে ঘেরা দেয়। পরে সেখান থেকে প্রায় শত বছর পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে কর্তনকৃত গাছের গোড়া অপসারণ শুরু করে।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাহাড়টিতে আর কোনও স্থাপনা যেন না হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আইন ও বিচার বিভাগকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোকে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যেরকম নির্দেশনা দেবে সেভাবে কাজ করবো।  

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় থাকা অবৈধ স্থাপনা অপসারণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, কোনও পাহাড় বা টিলার ওপর কোনোরূপ স্থাপনা করা যাবে না সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় বা টিলার ওপর কোনোরূপ স্থাপনাই শুধু নয়, কোনো ধরনের পরিবর্তনই করা যাবে না। ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমির ওপর পরিবেশ বিনষ্টকরণমূলক সকল ধরনের কার্যক্রমের বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে জানানো হয়েছে।

জানা যায়, এখানে পাঁচটি ভবনে মোট সাড়ে তিন হাজার আইনজীবীর চেম্বার রয়েছে। বর্তমানে সমিতির ভোটার ছয় হাজার। এ অবস্থায় নতুন করে আরও দুটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন ভবন দুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘একুশে ভবন’ ও প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’। ভবন দুটিতে মোট ৬শ চেম্বার হবে। এজন্য গত মাসে চেম্বার বরাদ্দ দিতে আবেদন আহ্বান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে ‘একুশে ভবন’ নির্মাণকাজ শুরু করে আইনজীবী সমিতি।

ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং পরিবেশ অধিদফতর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে আইনজীবীদের ৫টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।  

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কোর্ট হিলের খোলা জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ও অবগত আছেন। মৌখিকভাবে ও চিঠি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনুরোধ করেও ব্যর্থ হওয়ায় আমরা এ নোটিশ পাঠিয়েছি। সামনে আমাদের নির্বাচন। এ বিষয়ে এখন ভাবছি না। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। নির্বাচনের পর এটা নিয়ে আমরা বসবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২ 
বিই/এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।