ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ঋণের টাকা আগুনে ছাই 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
ঋণের টাকা আগুনে ছাই  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: মো. হাসান মাহমুদ ২১ বছর ধরে চাকরি করেছেন অন্যের দোকানে। দীর্ঘ এই সময়ে জমানো টাকা আর ১৭ লাখ টাকা লোন নিয়ে দেড় বছর আগে জহুর হকার্স মার্কেটে দিয়েছিলেন কাপড়ের দোকান।

 

সেই দোকান নিয়ে একটু একটু করে বড় হচ্ছিল হাসানের স্বপ্ন। কিন্তু কে জানতো, হাসানের সব স্বপ্ন মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে!

হাসানের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

এক সন্তানের জনক তিনি। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দোকানের অদূরে রিয়াজুদ্দিন বাজারে ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থাকতেন, যাতে দোকানে দ্রুত আসা-যাওয়া করা যায়। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ছুটে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু তার আগেই আগুন নিয়ে যায় সবকিছু।  

জানতে চাইলে বাংলানিউজকে হাসান মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন অন্যের দোকানে চাকরি করেছি। স্বপ্ন দেখতাম নিজে দোকান দেবো। স্বপ্ন সত্যিও হয়েছিল। কিন্তু আগুন কেড়ে নিয়েছে সেই স্বপ্নটুকু।  

শুক্রবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাতে এই মার্কেটে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে হাসানের দোকানটি। শুধু হাসান নন, তার মতো এক ঘণ্টার আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন আরও অনেকেই।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত সাড়ে নয়টায় স্থানীয় মসজিদের পাশে দোতলার একটা দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে নয়টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে যায় ২৬টি দোকান।

শনিবার (১২ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকাটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে যাওয়া কাপড়-চোপড় দোকান থেকে বের করে স্তুপ করে রাখছিলেন দোকানিরা। সেই স্তুপ থেকে তারা খুঁজছিলেন ভালো কাপড়গুলো। পোড়া কাপড়ের স্তুপ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই গাড়ির দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলেন দোকানি সাইফুল ইসলাম পিয়ারু।

তার বাড়ি রাউজানের গহিরায়। সাইফুলের দোকানে পুড়েছে ১১ লাখ টাকার মালামাল। কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ধার করে ঈদের আগে বাজার করে রেখেছিলেন সাইফুল।  

ভাইয়ের দোকান পুড়ে ছাই যাওয়ার খবর পেয়ে রাউজান থেকে ছুটে এসেছেন বোন রেনু আখতার। ভাইয়ের অসহায়ত্ব দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিও।  

কান্নাজড়িত কন্ঠে রেনু আখতার বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাই বিভিন্ন জন থেকে টাকা ধার করে দোকান দিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে তিন লাখ টাকার নতুন জামা কিনেছে। কিন্তু সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ভাই নিঃস্ব হয়ে গেছে।  

সাইফুল বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার মার্কেট বন্ধ ছিল। তাই দ্রুত আসতে পারিনি। আগুন লাগার খবর পেয়ে যারা ছুটে এসেছে সবাই ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিল। যারা এসেছে সবাই যদি সহযোগিতা করতো, তাহলে এত ক্ষতি হতো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ১২ মার্চ, ২০২২
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।