ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দিন রাতের পার্থক্য: ভূমিমন্ত্রী 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দিন রাতের পার্থক্য: ভূমিমন্ত্রী  বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করা হলে দিন ও রাতের পার্থক্য হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে মোটেল সৈকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ কল্পে সমাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে এত পার্থক্য হবে, কেউ স্বপ্নে ভাবেনি জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, বাংলাদেশ যে শক্ত মজবুত জাতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে তা বিশ্ব স্বীকৃত দিয়েছে। এটা সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য সম্ভব হয়েছে।

পাকিস্তানের টাকার মান আমাদের চেয়ে অনেক কম। আমাদের ১ টাকা পাকিস্তানের দেড় টাকার উপরে আমার জানা মতে। পাকিস্তানের চেয়ে সব ক্ষেত্রে আমাদের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। একটা সুন্দর ব্যালেন্স দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।  

টিসিবির গাড়ির দিকে মানুষ যাচ্ছে আমরা দেখতেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার বসে নেই। সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে। সরকার এটা উপলব্ধি করেছে। আমরা এটাকে কমফোর্ট জোনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কীভাবে সরবরাহ বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি। বাস্তবতাও মানতে হবে। যুদ্ধের বিষয়ে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যুদ্ধের প্রভাব আগামী তিন মাস পরে পড়বে। করোনার সঙ্গে দুই বছর যুদ্ধ করেছে পৃথিবী। সমস্ত সরকারকে এটা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তেলের বাজারে পড়েছে।  

মাদক বড় ধরনের সমস্যা জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন,  কিছু মাদক মেডিক্যালে রোগীদের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফেনসিডিল থেকে মাদকের সূত্রপাত আমার মনে হয়। যারা ফেনসিডিল খায়, তারা এখন অন্য মাদক সেবন করে। বড় লোকের ছেলেদের কীসের টেনশন? তারা সকালে উঠে বাবার হোটেল খাচ্ছে। তারা ফ্যাশনের জন্য মাদকসেবন করেন। আনোয়ারা-বাঁশখালী রোড ব্যবহার করে একসময় মাদক পাচার হতো। এখনো বিভিন্ন রোড ব্যবহার করছে। প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় এ ধরনের কর্মশলা করতে হবে। ইন্টারনেট এসেছে, সেটার কারণে মাদক ব্যবহার কম হচ্ছে। আমি ফেসবুক পছন্দ করি না। কাজে কর্মে যারা আছে তারাও ব্যবহার করছেন। যাদের প্রয়োজন নেই, তারও ব্যবহার করছেন।  

সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো ভাবে মাদকের ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একসময় আমরা টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করতাম। এখন আমরা সেটা করছি না। এখন সমাজিক মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারছি। আমাদের আগামী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত গড়ার জন্য প্রত্যেকের অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে প্রস্তুত করে যেতে না পারলে এই দেশ সোমালিয়া হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা জননেত্রী শেখ হাসিনা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। গত ১৩ বছর এদেশ এগিয়ে গেছে। দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাব হয়েছে। তবে দক্ষদের চাকরি আছে, তাদের চাহিদা আছে।

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ২০৪১ সালে দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে যেমন বলেছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে ঠিক তেমনই মাদকের বিরুদ্ধেও ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ উৎপাদন করে থাকে। মাদকের অপব্যবহার হতো, মাদক ইয়াবার পর এখন আইস এলএসডি, ডিওবি এখন মাথাব্যথা, এসব ড্রাগ লেখা প্রিন্টের মাধ্যমে বহন করা হচ্ছে। আগামী কয়েক বছর পর আমরা একটা অক্ষম জনগোষ্ঠী পাব। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠিকানা বিহীন লেনদেন হচ্ছে। যা এনফোর্সমেন্ট করে ঠেকানো সম্ভব নয়৷। কারাগারে ৬০ শতাংশ মাদক মামলার আসামি। কারাগারে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে চাকরিচ্যুত হচ্ছে অনেকে। ৫-৭ বছর পর,অক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে পাব। যে জ্যামিতিক হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বন্ধ করার বিকল্প নেই।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, যদি মাদকের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৩০ ও ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করে চিকিৎসার গুণগত মান বৃদ্ধি করে মাদকাসক্ত রোগীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা হ্রাসের জন্য আয়োজিত এ কর্মশালার মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে একযোগে এই যুদ্ধে নামতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে নতুন ধরনের মাদক পাচার ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।  তরুণদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। মাদকের এ আগ্রাসন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করছে যা দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। যুব সমাজ তথা জাতিকে মাদকের এ ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষার লক্ষ্যে মাদকবিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা এবং সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা এবং মাদকাসক্তদের বিদ্যমান সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেবা প্রদান জরুরি। তারই আলোকে মাদক নির্মূলে সমন্বিত খসড়া কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এ খসড়া কর্মপরিকল্পনাটি পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করে নিড বেইজড কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। কর্মপরিকল্পনার আলোকে ওয়ার্ড, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পৌরসভা, জেলা, বিভাগে সারা বছরব্যাপী মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকবে।

বিজিবি ডেপুটি রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আজগর বলেন, অল্প পরিশ্রমে আয় হচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। সীমন্ত এলাকায় বর্ডার রিং রোড হচ্ছে। বিভিন্ন সীমান্তে যে গ্যাপ আছে, তা কমে যাবে। সম্পূর্ণ নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছে আমেরিকা। তারপরও মাদক যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল। কর্মশালায়, ডিআইজি (চট্টগ্রাম রেঞ্জ), সিএমপির কমিশনার ও উপ-কমিশনারগণ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শক, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগ ও প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ ১৮০ জনেরও বেশি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২১
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।