চট্টগ্রাম: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ওদের জন্য মমতা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘এই যে মায়ের অনাদরে ক্লিষ্ট শিশুগুলি, পরনে নেই ছেঁড়া কানি, সারা গায়ে ধূলি। ’
কবিতাটি বেশ পুরোনো হলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে এসেও প্রাসঙ্গিক।
বর্তমান সমাজের এসব মানুষগুলোর কথা চিন্তা করেই কিনা নজরুলের এ কবিতার বাণী।
ঈদকে সামনে রেখে যখন সারা শহর জেগে, তখনও পুরোনো রেল স্টেশন জুড়ে সুনশান নীরবতা। এখানে নেই শপিংয়ে যাওয়ার তোড়জোর, নেই আসন্ন ঈদ নিয়ে কোনো আমেজ।
রোববার (২৪ এপ্রিল) গভীর রাতে কথা হয় এমনই কিছু মানুষের সঙ্গে। তাদের বর্ণনায় উঠে আসে জীবন সংগ্রামের চিত্র।
সবে কাজ শেষ করে বিছানা পেতেছেন মো. রফিক। দীর্ঘদিন ধরে রেলস্টেশনে কুলির কাজ করছেন তিনি। শোনান তাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প।
রফিক বলেন, রেলে যেসব মালামাল আনা হয় তা লোড-আনলোড করি। বিকেলে ৪ টায় শুরু করে এই মাত্র (রাত ২ টা) শেষ হলো। আবার সকালে উঠে কাজে লেগে পড়তে হবে। তাই স্টেশনেই শুয়ে পড়েছি। যেহেতু কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, স্টেশনের প্লাটফর্মই আমাদের বিছানা।
রেল স্টেশনে বিশ্রামরত কালাম নামে আরেকজন বলেন, তাদের ঘর বাড়ি না থাকায় এই স্টেশনেই থাকেন। কিন্তু প্রায় রাতেই পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে উঠে যেতে হয়।
রমজানের সেহরি খাওয়ার সুযোগ হয় কিনা জিজ্ঞেস করলেই চেহারা মলিন হয়ে ওঠে কালামের।
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর একটাই উত্তর, 'কপালে জুটলে খাই, না হলে নাই। '
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্লাটফর্মে অনেক অসহায় মানুষজন ঘুমায়। তাদের বিষয়টি আমরাও বুঝি। কিন্তু রেলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আমাদেরও মাঝে মধ্যে কঠোর হতে হয়। তবে সবসময় না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
এমআর/টিসি