ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে লেখা হচ্ছে সোনালি অধ্যায়

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২২
চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে লেখা হচ্ছে সোনালি অধ্যায় ...

চট্টগ্রাম: রাত ৮টা। এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজের নিজস্ব গিয়ারের সাহায্যে নামানো হলো ৪০ ফুট লম্বা একটি কনটেইনার।

এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫ বছরের ইতিহাসে নতুন একটি সোনালি অধ্যায় যুক্ত হলো।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম জিসিবি, সিসিটি ও এনসিটির বাইরে জোয়ার-ভাটা নির্ভর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে একটি বেসরকারি জেটিতে কনটেইনার আনলোড করা হলো।

এর ফলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং দেশ এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেল।

বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের মূল জেটির বাইরে প্রথমবারের মতো একটি জাহাজের কনটেইনার নামানো হচ্ছে। এটি নতুন একটি ইতিহাস।

এর আগে ওই জেটিতে বন্দরের ১টি ১৬ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্ক লিফট, ৮টি স্প্রেডার, ৪টি ট্রেইলার, বার্থ অপারেটরের লজিস্টিকস সাপোর্টসহ যন্ত্রপাতির বহর ওই জেটিতে পাঠানো হয়

তিনি জানান, নিরাপদে যত দ্রুত সম্ভব কনটেইনারগুলো আনলোড করা হবে।  

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, বন্দরের বহির্নোঙরে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ ফুট লম্বা ১১৫৬টি রফতানির কনটেইনার বোঝাই এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজকে নিরাপদে বুধবার (৪ মে)  কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে আনা হয়েছে।

বন্দরের টাগ কাণ্ডারী ১,৬,১০,১১, লুসাই, জরিপ-১১, বর্ষণ, প্রান্তিক সরোয়ার, মুরিং বোট সন্দ্বীপের সহযোগিতায় জাহাজটি নিরাপদে বার্থিং করানো হয়।  

গত ১৪ এপ্রিল বন্দর ত্যাগ করার সময় কুতুবদিয়ার কাছে এমটি ওরিয়ন এক্সপ্রেস জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল। এ সময় হাইয়ান সিটির পোর্ট সাইডে কার্গো হোল্ডে ছিদ্র হয়ে পানি ঢুকে জাহাজটি ৭ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়। পানি ঢোকায় ড্রাফট বেড়ে ১০ দশমিক ৭ মিটারে দাঁড়ায়। উপক্রম হয় ডুবে যাওয়ার। বিশেষ উদ্যোগে জাহাজটি কুতুবদিয়া এলাকায় নোঙর করা হয়।

হাইয়ান সিটিতে রফতানি কনটেইনারগুলোর মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। জাহাজটির মেরামতের জন্য কনটেইনার খালাস করা আবশ্যক। তাই ঈদের ছুটি, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাহাজ মালিকের প্রতিনিধি, স্থানীয় এজেন্ট, স্যালভেজ সংস্থা, পি অ্যান্ড আই, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দ্রুত সমন্বয় সভা করে জাহাজটি বার্থিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে কনটেইনার খালাসের কাস্টম পারমিট নেওয়া হয়। জেটির ফোরশোরে ১০ দশমিক ৭ মিটার ড্রাফটের উপযোগী ড্রেজিং সম্পন্ন করানো হয়। এরপর বন্দরের নৌবিভাগের দক্ষ পাইলটিং, টাগ, স্থানীয় নৌ প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক মানের স্যালভেজ কোম্পানি প্রান্তিক বেঙ্গল সার্ভিসের সহযোগিতায় জাহাজটি কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে বার্থিং করানো হয়।  

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেছেন, জাহাজটি উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে ৮০০ কোটি টাকার রফতানি পণ্য যেমন রক্ষা পেয়েছে তেমনি জাহাজটি ডুবে গেলে বড় আর্থিক লোকসান ছাড়াও মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা।

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজে তত্ত্বাবধান করেন বন্দরের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান। উদ্ধার কাজ তদারকি করেন ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম, হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম, সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মো. কামরুল আলম।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।