ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৯ বছর পর সম্মেলন, উজ্জীবিত উত্তর জেলা যুবলীগ

মিনহাজুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২২
১৯ বছর পর সম্মেলন, উজ্জীবিত উত্তর জেলা যুবলীগ ...

চট্টগ্রাম: উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন রোববার (২৯ মে)। এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের চেয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ বেশি চলছে। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ নিজ নেতার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে।
সমর্থকদের মধ্যে কার নেতা পদ পাবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।  

উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায় নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর ছবি দিয়ে তৈরি করছেন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন। শেষমুহূর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। আবার কেউ কেউ ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরে-ফিরে আলোচনা একটাই, এবারের সম্মেলনে কারা আসছেন নেতৃত্বে। বিশেষ করে শীর্ষ দুই পদ নিয়েই সবার আগ্রহ। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে নতুন ও পুরাতন নেতাদের কর্মকীর্তি নিয়ে। কারা নেতৃত্বে আসলে জেলা যুবলীগ শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। হাটহাজারী উপজেলার পার্বতী স্কুল মাঠে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হবে।

২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর উত্তর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। এতে সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহম্মদকে সভাপতি, এসএম শফিউল আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও গত ১৯ বছরেও কমিটি হয়নি। ব্যক্তিগত কারণে সভাপতি সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহম্মদ পদত্যাগ করলে কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সহ-সভাপতি জাফর আলম। ২০১৩ সালের  দিকে ওমর ফারুক যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সহ-সভাপতি এসএম আল মামুনকে সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে পুরোনো কমিটি বহাল রাখা হয়।  

গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এতে সভাপতি পদের জন্য ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ২২ জনের আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এছাড়াও গত ১০ মে আওয়ামী যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। ১৪-১৬ মে পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়েছে।

সম্মেলন ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিভিন্ন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য গোলাম কিবরিয়া, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বপন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, নুরুল মোস্তফা মানিক এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আবুল বশর।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই কমিটির সাবেক সদস্য মো. সাহেদ সরওয়ার, চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, এসএম আল নোমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সিটি কলেজের সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামসুদ দোহা সিকদার আরজু, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন বাবু।

সম্মেলন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১২টি উপ কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে - অর্থ উপ কমিটি, প্রচার-প্রকাশনা উপ কমিটি, শৃঙ্খলা উপ কমিটি, আপ্যায়ন উপ কমিটি, মঞ্চ সাজসজ্জা উপ কমিটি, সাংস্কৃতিক উপ কমিটি, অভ্যর্থনা উপ কমিটি ও স্বাস্থ্য উপ কমিটি। প্রস্তুতি কমিটিতে উত্তর জেলা যুবলীগের কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সব সাংগঠনিক ইউনিট ও পৌরসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান বাংলানিউজকে বলেন, সংগঠনকে  গতিশীল রাখতে অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসময়ে যুবলীগের রাজনীতি করেছি। মানবিক যুবলীগের মানুষের কল্যাণে মানবিক কাজগুলো করতে সুযোগ চাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমার অতীত ত্যাগ, শ্রম ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করবেন আশাকরি।  

উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আজকের যুবলীগ সব অনৈতিক ও অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবদমন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে। জেলা, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অসংখ্য মামলায় বার বার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। সেটার মূল্যায়ন কেন্দ্রীয় ‍যুবলীগ করবে বলে আশা করি।  

চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম বলেন, বির্তকিতদের যুবলীগে স্থান হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্দিনের কর্মীরা যদি রাজনীতি থেকে ছিটকেও পড়ে লাইনচ্যুত হয়, তাদের পুনরায় লাইনে আনা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে দুর্দিনের সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। সারাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির মতো করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad