ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে পাহাড় ধস 

শিশু দুটি জানে না, তাদের মা আর নেই

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
শিশু দুটি জানে না, তাদের মা আর নেই

চট্টগ্রাম: শুক্রবার দিবাগত রাত। ঘড়ির কাটা সাড়ে বারোটা পেরিয়ে একটার ঘরে ছুটছে।

স্বাভাবিকভাবেই নগরের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনার বাসিন্দারা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এর মধ্যেই ঘরের ওপর আছড়ে পড়ল পাহাড়।

সেই ধসে অন্য তিনজনের সঙ্গে মারা গেলেন শাহিনুর বেগম নামের এক মাও। উদ্ধারের পর দেখা গেল মায়ের বুক আগলে সাত মাসের দুই জমজ শিশু। একটু আঘাতও লাগেনি তাদের গায়ে।

আলৌকিকভাবে দুই শিশুর বেঁচে যাওয়া নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন নিজের মৃত্যু জেনেও উপোড় হয়ে শিশুদের বুকে আগলে রাখেন মা। যার ফলে ঝড়ঝাপটা সবই গেছে মায়ের ওপর দিয়ে। ফলে নিচে ‘নিরাপদে’ থাকা শিশু দুটির গায়ে একটুও আঁচড় লাগেনি।

শুক্রবার সকাল থেকে ভারি বর্ষণ। পাহাড় ধসের শঙ্কায় অনেকে ছুটেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। তবে সাত মাসের যজম দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন মা শাহিনুর বেগম।

এর মধ্যেই হঠাৎ পাহাড় ধস। পাহাড়ের মাটি এসে পড়ে শাহিনুরের সেমিপাকা ঘরে। বরিশালঘোনায় এ পাহাড়ধসে আরও মারা গেছেন তাদের ছোট খালা মাইনুর বেগমও। আহত হন নানা-নানি। বাবা এক ছেলেকে নিয়ে দাদার বাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

ঘটনার পর প্রতিবেশীরা শিশু দুটিকে উদ্ধার করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস টিম এসে উদ্ধার করে তাদের মা, খালা ও নানা-নানিকে। তাদের  চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে মা ও খালাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নানা ফজলুল হক ও নানি রানু বেগম চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

সাত মাসের দুই যমজ শিশু। তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াছমিন তিন্নি। চাচী তানিয়া আকতারের সঙ্গে হাসি খুশিতে খেলছেন। কিন্তু অবুঝ শিশু দুটি জানে না, তাদের বুকে আগলে রাখা মা আর নেই।  

৬ বছর আগে লক্ষ্মীপুর থেকে এসে নগরের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনায় বসতি স্থাপন করেছিলেন তারা।  

চাচী তানিয়া আকতার বাংলানিউজকে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই তারা নিরাপদ দূরত্ব চলে যান। কালকে কেন জানি থেকে গেছেন। তাদের বাবা ছিল না। আরেক সন্তানকে নিয়ে দাদার বাসায় গিয়েছিল। এখন এই ছোট বাচ্চা দুটিকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। তাদের দেখবে কে? কিভাবে মানুষ হবে?

শ্রমিকের কাজ করেন তানহা ও তিন্নির বাবা জয়নাল আবেদীন। শিশু দুটিকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদছিলেন তিনি।  

তিনি বলেন, মেয়ে দুটির দিকে থাকাতেই পারছিনা। বুক ফেটে কান্না আসছে। অনেক বার বলছি এখান থেকে সরে দূরে কোথাও বাসা নিবো। কিন্তু শুনলো না। এ দুই সন্তানকে নিয়ে আমি এখন কি করবো?

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
বিই/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।