ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রামের ট্যানারি শিল্প

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রামের ট্যানারি শিল্প ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম:  শিল্প বাণিজ্যের শহরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। কিন্তু ট্যানারি শিল্পের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো চিত্র।

স্বাধীনতার পর থেকে ২২টি ট্যানারি থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র একটিতে। পাশাপাশি কমেছে আড়তদারের সংখ্যাও।
ফলে এ দুই সংকটে ধুঁকছে এ শিল্প।  

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে ট্যানারি ছিল ২২টি। পরিবেশগত কারণ ও লোকসানে পড়ে বিভিন্ন সময় একে একে বন্ধ হয়ে যায় ২১টি। সর্বশেষ পরিবেশগত ঝামেলায় বন্ধ হয়ে যায় মদিনা ট্যানারি। বর্তমানে চট্টগ্রামে টিকে আছে ‘টিকে গ্রুপে’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিফ লেদার। এ ট্যানারিতে চট্টগ্রামে সংগ্রহকৃত চামড়ার মাত্র ১০ শতাংশ কেনার সক্ষমতা রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশই নিতে হয় ঢাকায়। তাছাড়া গত ৩০ বছরে এ জেলায় নতুন করে গড়ে উঠেনি কোনো ট্যানারি। অথচ কাঁচামালের সহজ (চামড়া) প্রাপ্তি, সহজলভ্য শ্রমিক, পরিবহন সুবিধা, ব্যাংক ঋণ সুবিধাসহ সব ধরনের অবকাঠামোগত সুযোগ আছে চট্টগ্রামে।  

সর্বশেষ ট্যানারি স্থাপন করে টিকে গ্রুপ। নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকায় ১৯৯১ সালে স্থাপিত হয় রিফ লেদার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বছরে এক থেকে দেড় লাখ পিস কাঁচা চামড়া কিনে থাকে। আর কাঁচা চামড়া থেকে উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্য শতভাগ বিদেশে রফতানি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের পর আর নতুন করে কেউ ট্যানারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিনিয়োগ করেনি।  

চট্টগ্রামের একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদারের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মার্কেটিং) মুখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে যেসব ট্যানারি ছিল, এর প্রায় সবগুলোই পাকিস্তান আমলে গড়ে উঠেছিল। শুধু রিফ লেদার স্থাপিত হয় ১৯৯১ সালে। সারা বছর আমরা চামড়া কিনে থাকি। কোরবানির চামড়া থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় এক লাখ পিস। তবে এবার নিজেরাও কাঁচা চামড়া কিনবো। আমাদের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যান্যবার বেশ কিছু কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছে। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চামড়া নষ্ট হওয়া আমাদের অর্থনীতির জন্য ক্ষতি।  
 
দীর্ঘদিন এ খাতে বিনিয়োগ না আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আসলে এ ধরনের ব্যবসায় অভিজ্ঞতা লাগে। পাকিস্তান আমলে যেসব ব্যবসায়ী ছিলেন, তাদের বংশপরম্পরায় অভিজ্ঞ ছিল। তারা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া ভালোভাবে দেখে ও বুঝে কিনতেন। এছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াজাত থেকে সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত বেশ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। না হলে এ খাতে সুবিধা করা কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া বিশ্ববাজারে ব্যবসা করতে হলে পরিচিতির পাশাপাশি মানসম্মত চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে হয়, যা আমরা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে চামড়াশিল্প অবস্থান হারিয়েছে। দিন দিন এ শিল্পে ধস নামছে। সরকারের উচিত, এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা। এছাড়া ট্যানারি থেকে বের হওয়া বর্জ্য  ক্ষতিকারক। ট্যানারির বর্জ্য পরিশোধনে ইটিপি থাকা আবশ্যক। সুতরাং শুধু ট্যানারি স্থাপন করলেই হবে না, ইপিটি স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে শুধু ট্যানারি নয়, কমেছে আড়তদারও। চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে চামড়ার আড়ত ছিল ২০০টির মতো। এর মধ্যে ১১২টি আড়তের মালিকরা সমিতির সদস্য। চট্টগ্রামে পশু কোরবানি হয় সাড়ে ৬ লাখের মতো। এখানে চামড়া সংরক্ষণ করা যেত প্রায় ৫ লাখের মতো। কিন্তু আড়তদার কমতে থাকায় সব চামড়া কিনে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।  

আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সমিতিতে এখন মাত্র ৩২ জন সদস্য রয়েছে। আগে যার সংখ্যা ছিল ১১২ জন। আগে যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা যেত এখন ৩২ জনের পক্ষে সে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এবার আশা করছি চামড়া নষ্ট হবে না।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে- বিভিন্ন উপজেলার চামড়াগুলো যেন সেখানেই সংরক্ষণ করা হয়। যদি এ ঘোষণার সঠিক বাস্তবায়ন হয়, তাহলে চামড়া নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।