ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬ বছর পর নতুন কনটেইনার টার্মিনাল!

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬ বছর পর নতুন কনটেইনার টার্মিনাল! পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।

চট্টগ্রাম: নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণের প্রায় ১৬ বছর পর নতুন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মিত হলো চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ বার্থিং ও বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউ’স কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে।

শুরু থেকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে জেটিসহ প্রকল্পটি। শিগগির পিসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ শুরু করতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বাংলানিউজকে বলেন, পিসিটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজগুলো শেষ করতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সাইটে কাজ করছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পিসিটিতে ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) ৩টি কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। ৩২ একর জমিতে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যাকআপ ইয়ার্ড প্রায় ১৬ একর। যেখানে ৪ হাজার ৫০০ টিইইউ’স কনটেইনার ধারণক্ষমতা রয়েছে।

এ প্রকল্পে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের আরসিসি পেভমেন্ট (অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও সড়ক), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ৬ মিটার উঁচু ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, বিমানবন্দরগামী গাড়ি চলাচলের জন্য ৪২০ মিটারের ফ্লাইওভার, চার লেনের পৌনে ১ কিলোমিটার এবং ৬ লেনের ১ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।  

পিসিটির জেটি নির্মাণের জন্য পাইলিংকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজটি করেছে সাইফ পাওয়ারটেকের সিস্টার কনসার্ন ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।  চীন থেকে অত্যাধুনিক পাইল ড্রাইভিং শিপ এনে টেস্ট পাইলিং করা হয়েছিল। মালয়েশিয়া থেকে ৩০-৩৮ মিটার দীর্ঘ দশমিক ৯ মিটার ব্যাসের ১ হাজার পাইল আনা হয়েছিল। এ প্রকল্পে চ্যালেঞ্জ ছিল নদীপাড়ের গুরুত্ব এয়ারপোর্ট সড়ক সরিয়ে ফ্লাইওভার চালু করা, রেড ক্রিসেন্ট, মেরিন ফিশারিজ, কাস্টম এফ ডিভিশন, ওমেরার স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।

বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে এনসিটি, সিসিটির দূরত্ব যেখানে ১৪-১৫ কিলোমিটার সেখানে পিসিটির দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। এখানে ড্রাফট রয়েছে ১২ মিটার। পিসিটি পরিচালনার জন্য অপারেটর হিসেবে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি), দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ডেনমার্কের এপি মুলার ইত্যাদি। যে প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত কার্যাদেশ পাবে তারাই কনটেইনার ও শিপ হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসবে। ফলে বন্দরের সাশ্রয় হচ্ছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।  

পিসিটি প্রকল্পের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সরকার বাংলানিউজকে বলেন, পিসিটির প্রধান কাজ ছিল জেটি নির্মাণ। এ কাজটি শতভাগ শেষ। পুরো প্রকল্পের প্রায় ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার ট্যাংক, প্রশাসনিক ভবনের পাশে ওভারহিট ওয়াটার ট্যাংক ও ইয়ার্ড কনস্ট্রাকশনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইয়ার্ডের কাজও প্রায় ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন। বন্দর কর্তৃপক্ষ চলতি জুলাই মাসের শেষ দিকে অপারেশন শুরু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল। কয়েক দফা বাড়িয়ে নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।