ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালদায় ডলফিন রক্ষার দায়িত্ব কার

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
হালদায় ডলফিন রক্ষার দায়িত্ব কার ...

চট্টগ্রাম: সপ্তাহের ব্যবধানে হালদা নদীতে মরেছে ৩টি ডলফিন। দেখার যেন কেউ নেই।

অথচ হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ডলফিন রক্ষার দায়িত্ব বনবিভাগের। ডলফিনের মৃত্যুর খবর বনবিভাগকে জানালেও উদ্ধারে নেই কোনও সহযোগিতা।
 

দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষায় ইঞ্জিনচালিত নৌ-যান চলাচল ও খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না বালুখেকোরা। প্রজনন মৌসুমের (ফেব্রুয়ারি–জুলাই) ছয় মাস ছাড়া অন্য সময় চলাচল করছে বালু ও পাথর বহনকারী বার্জ। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ জালসহ নৌ পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে মাছ শিকারীরা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল হালদা নদীতে খননযন্ত্র ও ইঞ্জিনচালিত নৌ-যান ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করে। এছাড়া  আরও চারটি সুপারিশ করা হয়।  

সেগুলো হলো: বালু তোলা বন্ধ, নদীতে জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ, কল-কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি নদীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং নদী তীরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ডলফিনের নিরাপদ বিচরণ, প্রজনন ও গবেষণার ব্যবস্থা করা। জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব সুপারিশ এখনও কাগজে-কলমে।  

জানা গেছে, হালদা নদীতে এ পর্যন্ত ৩৮টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। একটি ডলফিনের মরদেহ উদ্ধার করে সেটি সংরক্ষণ অথবা মাটি চাপা দিতে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে এসব ডলফিন উদ্ধার এবং সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু ডলফিনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও তাদের কোন খবর থাকে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত ১০টি মৃত মা মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। এসবের মৃত্যু হয়েছে আঘাতের কারণে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত হালদা ও এর শাখা খালে মোট ৩৮টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠে। প্রায় সবকটি ডলফিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত রয়েছে। একাধিক ডলফিনকে হত্যাও করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

হালদা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত (অতি বিপন্ন প্রজাতি) জলজ প্রাণী হলো ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গত চার বছরে হালদায় ৩৮টি ডলফিন মারা যাওয়ার ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক।

নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনজুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হালদা নদীতে যে হারে ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে এটি উদ্বেগজনক। হালদার ডলফিন রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় হালদা ডলফিন শূন্য হতে বেশি সময় লাগবে না।  

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহিদুল আলম বলেন, ডলফিন ও হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত কাজ করছে। ডলফিনের মৃত্যু রোধে ঘটনা তদন্ত করে সেগুলো রক্ষায় নতুন কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।  

২০১৯ সালে হাইকোর্ট হালদা নদীর ডলফিন রক্ষায় একটি কমিটি গঠন করেন। সেখানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সদস্য রাখা হয়।  

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) মো. রফিক বাংলানিউজকে বলেন, ভৌগলিক পরিবর্তনের কারণে ডলফিনগুলোর মৃত্যু হচ্ছে। ডলফিন মৃত্যুর খবর পেলেই আমরা ছুটে যাচ্ছি। সেটি উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।  

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হালদা দূষণের সকল উৎস আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। ইতিমধ্যে হালদা নদী সংলগ্ন ১৭টি শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যে শিল্প-কারখানা রয়েছে সেগুলোর বর্জ্য হালদায় পড়ে না।  

তিনি আরও বলেন,  হালদা নদী রক্ষায় যা যা করার দরকার আমরা সব করছি। হালদা নদীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছি। হালদা নদী সংলগ্ন ৯টি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু কি কারণে হালদায় ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে সেটি আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। বয়সের কারণেও ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।