চট্টগ্রাম: জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে শিশুমৃত্যুর হার ৩১ শতাংশ কমে। এ ছাড়া ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস পায় আরও ১৩ শতাংশ।
রোববার (৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় ‘মাতৃদুগ্ধ পান এগিয়ে নিতে, শিক্ষা ও সহযোগিতা হবে বাড়াতে’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উদ্যোগে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।
জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ হোসাইনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। স্বাগত বক্তব্য দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ুয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. রেজিনা ইসলাম, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ডা. শারমিন নাহার বাশার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. ইমং প্রু চৌধুরী ও ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শিহাব উদ্দিন।
বক্তব্য দেন প্যাথফাইন্ডারের বিভাগীয় সমন্বয়কারী শেখ নজরুল ইসলাম ও ইউনিসেফ এর বিভাগীয় নিউট্রিশন অফিসার মো. শাহাবুল ইসলাম। সভার পূর্বে বর্ণাঢ্য র্যালি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠানে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, নবজাতকের জন্য শাল দুধই হলো প্রথম টিকা। শাল দুধে রয়েছে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। অন্য কোনও খাবার ছাড়াই ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ পান করালে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকবেন। এজন্য প্রসূতি মাকে খেতে হবে প্রচুর তরল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। বর্তমান মহামারীতে করোনা পজিটিভ মা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারে। সরাসরি ও বিকল্প পদ্ধতিতেও শিশুকে দুধ পান করানো সম্ভব। বুকের দুধের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। জন্মের সাথে সাথে মায়ের শাল দুধই শিশুর প্রথম টিকা ও খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সংক্রামক থেকে শিশুকে দ্রুত রক্ষা করে। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে মাতৃদুগ্ধ পানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতেই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। উপযুক্ত শিক্ষা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই শিশুর স্তন্যপান নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, মায়ের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে হবে। মায়ের দুধ খাওয়ানোকে জনস্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোচ্চ সফলতার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। একইসাথে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ভাতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃদুগ্ধদানের সুরক্ষা, প্রচার ও সমর্থনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর কাউন্সেলিং ও মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর খুব দ্রুত শাল দুধ খাওয়ালে মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয় ও গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে। ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। সন্তান প্রসবের পর কোনও মা মারা গেলে শুধুমাত্র ঐ শিশুকে অন্য মায়ের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে বা শিশু চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্রে কারণ উল্লেখ করে বিকল্প হিসেবে ভালোমানের গুঁড়ো দুধ দিতে পারবেন।
আইবিএফএএন এর তথ্য অনুযায়ী, শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ, জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২২
এসি/টিসি
