ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিল্পীর ছোঁয়ায় সাজছে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
শিল্পীর ছোঁয়ায় সাজছে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা সদরঘাট কালীবাড়িতে মৃৎশিল্পীরা দিন-রাত ব্যস্ত প্রতিমা গড়ার কাজে। ছবি: উজ্জ্বল ধর 

চট্টগ্রাম: ইউনেসকোর ইনট্যানজিবল হেরিটেজের স্বীকৃতি পাওয়া বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদোৎসব কড়া নাড়ছে দরজায়। আর মাত্র একুশ দিন বাকি।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এরই মধ্যে প্রতিমালয়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় পূর্ণরূপ পাচ্ছেন দৃষ্টিনন্দন সব প্রতিমা।

২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠ শোনার অপেক্ষায় ভক্তকূল। শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের ওপর ঝরে পড়া শিউলি কুড়ানোর সময়টায় মাতৃবন্দনায় মিলিত হবেন সবাই। পঞ্জিকা অনুসারে, ১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ৪ অক্টোবর মহানবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।

তাই উৎসবের পূর্ণতা পায় যাদের হাতে, সেসব প্রতিমাশিল্পীর এখন কাটছে ব্যস্ত সময়। দক্ষ কারিগররা দিন-রাত কাজ করেই চলেছেন। তাদের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠছেন প্রতিমা। মায়ের প্রতিমা গড়তে গিয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ আর মহিষাসুর সঙ্গে দেবীর বাহন সিংহকে গড়তে হবে।

প্রতিমাশিল্পীদের ব্যস্ততা টের পাওয়া যায় নগরের সদরঘাট কালীমন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে। সেখানে সহযোগীদের নিয়ে প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পী সুজন পাল। তৈরি করা হয়েছে দুর্গার কাঠামো। সহযোগীরা ব্যস্ত লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ প্রতিমা গড়তে। ব্যস্ততার এ চিত্র চোখে পড়ে নগরের সব প্রতিমালয়ে।

সুজন পাল জানান, সময়ের সঙ্গে প্রতিমার গড়নেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই প্রতিমাশিল্পীদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। মাথায় রাখতে হয় মন্দিরের ঐতিহ্য ও সাজসজ্জার বিষয়টিও। সেভাবেই ফুটিয়ে তুলতে হয় প্রতিমার অবয়ব।

সুজন জানালেন, পারিবারিকভাবেই প্রতিমাশিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা। এ শিল্পে তারা এখন তৃতীয় প্রজন্ম। মারা গেছেন বাবা দুলাল কৃষ্ণ পাল। এখন তার সঙ্গী হয়েছেন ছোট ভাই সুশান্ত পাল।  

নগরের বিভিন্ন এলাকায় ১০টি প্রতিমালয় রয়েছে। এর মধ্যে সদরঘাট এলাকায় পাঁচটি, দেওয়ানজী পুকুরপাড়, হাজারী লেইন, লাভলেইন, চকবাজার, এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া ও কাট্টলী এলাকায় একটি করে প্রতিমালয় আছে। প্রতি মৌসুমে এসব প্রতিমালয়ের প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০টি করে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন শিল্পীরা।

প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিমার সাজসজ্জায় আগের তুলনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একসময় আলাদা আলাদা কাপড় ও অলংকার দিয়ে সাজানো হতো প্রতিমা। এখন মাটি দিয়ে সবকিছু সাজানো হয়। কাপড়সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাটির কাজের দিকে ঝুঁকেছেন আয়োজকেরা।

প্রতিমা তৈরির খরচ প্রতিবছরই বাড়ছে। বর্তমানে আকারভেদে একেকটি প্রতিমা তৈরি করতে ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কোনো কোনো মণ্ডপে লাখ টাকা খরচ করেও প্রতিমা তৈরি করা হয়। কাজভেদে একেকজন কারিগর মৌসুমের প্রতি মাসে আয় করেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।   

চট্টগ্রামের মৃৎশিল্পীদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম মৃৎশিল্পী সমিতি’ সূত্রে জানা গেছে, এখানকার প্রতিমাশিল্পীদের মূল ব্যস্ততা শুরু হয় ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে। মনসা পূজার পর বিভিন্ন মন্দির থেকে ডাক আসে তাদের কাছে। এরপর ছুটে যান নগরসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকি ছুটতে হয় তিন পার্বত্য জেলা ও পর্যটন নগর কক্সবাজারেও। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমালয়ে আগেভাগে প্রতিমা তৈরি করে রাখা হয়। বৈশাখে তেমন ব্যস্ততা থাকে না। শিল্পীরা কাজ শুরু করেছেন অনেক আগেই। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এরমধ্যে কিছু প্রতিমার অর্ডার হয়েছে। তবে এখনও শুরু হয়নি রংয়ের কাজ।

প্রতিমাশিল্পীরা জানান, কোনো কোনো মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে মাটির কাজও শেষ হয়েছে। ১৫ দিন পর থেকেই শুরু হবে প্রলেপ ও রং দেওয়ার কাজ। সব কাজ শেষ হবে পূজা শুরুর তিন-চার দিন আগে। এরপর ভক্তরা অপেক্ষায় থাকবেন দেবী দুর্গার আগমনের। মণ্ডপে স্থাপনের পর পুরোহিত করবেন প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা। বছরের এই একটা সময় প্রতিমা তৈরি করেই মূলত সারাবছর চলার জন্য সঞ্চয় করে রাখতে হয়।  

চট্টগ্রামে বংশানুক্রমিকভাবে যারা প্রতিমা তৈরি করেন তাদের বেশিরভাগের আদি নিবাস বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে। সেখান থেকে এসে তারা চট্টগ্রামে স্থায়ী হয়েছেন। একইভাবে প্রতিমা তৈরির কারখানায় যারা কাজ করেন তাদেরও বেশিরভাগ শরীয়তপুর, নেত্রকোণা, ফরিদপুর এলাকার।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৩শ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানান, ‘প্রতিমা যেখানে তৈরি হয়, সেখানে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিমা যারা তৈরি করেন, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যদি প্রতিমা ভাংচুর হয়, হামলা হয় সেক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা দায়ের হবে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।