ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুর্গাপূজার আরতিতে লাগবে ঢাকঢোল, বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
দুর্গাপূজার আরতিতে লাগবে ঢাকঢোল, বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: শারদীয় দুর্গাপূজা এলেই ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামণ্ডপগুলো। তাই এর আগে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরদের।

পঞ্জিকা অনুসারে, ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে মণ্ডপে হবে দেবীর অধিষ্ঠান।

২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ৪ অক্টোবর মহানবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।

মণ্ডপে পূজার সময় এবং সন্ধ্যারতিতে প্রয়োজন ঢাক-ঢোল। তাই নগরের পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইনে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে ঢাক-ঢোলের জন্য খোল তৈরি, রং করা, চামড়া লাগানো এবং পুরোনো ঢোল মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে।  

কারিগররা জানান, আগে দিন-রাত কাজ করেও অনেক বাদ্যযন্ত্র জমে যেত। এখন কম। বছরের অন্য সময়ে এত ব্যস্ততা না থাকলেও পূজার সময় কাজ বেড়ে যায়।  

পূজায় ঢাক-ঢোলের বাদ্য অপরিহার্য হলেও বর্তমানে সাউন্ড সিস্টেমের দাপটে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেড়েছে কাঠ ও চামড়াসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম। ফলে এখন তেমন লাভের মুখ দেখছেন না বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা।  

পাথরঘাটার মৃদঙ্গ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী দিলীপ দাস বাংলানিউজকে বলেন, আগের মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা নেই। শুধু পূজা এলেই ঢাক-ঢোল, মৃদঙ্গের চাহিদা বেড়ে যায়। আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে এসব বাদ্যযন্ত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও চেষ্টা করছি বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে। তিনি জানান, ঢোলের মতো দেখতে ‘জোরখাই’ ও ঢাক একজোড়া বিক্রি হয় ১২ হাজার টাকা, ভালো মানের তবলা পাওয়া যায় ৫ হাজার টাকায়। এবছর বিক্রি তুলনামূলক অনেক কম।

তাল তরঙ্গের স্বত্বাধিকারী সুশীল দাস বাংলানিউজকে বলেন, কারিগররা সারাবছর তেমন কাজ পায় না। শুধু দুর্গাপূজা এলেই বাড়ে ব্যস্ততা। এখন তেমন ব্যস্ততা নেই। তাই অনেকে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কারিগররা জানান, খোদাই করা কাঠের খোলের উভয় দিক চামড়া দিয়ে ঢেকে ঢোল তৈরি করা হয়। একমুখে থাকে গরু বা মহিষের মোটা চামড়া, অন্যপ্রান্তে থাকে ছাগলের পাতলা চামড়া। এতে মোটা ও চিকন শব্দে তালে তালে ঢোল বাজে।  

ঢোলের খোলটির পিঠে দড়ি টানা থাকে, লাগানো হয় পিতলের কড়া। কড়া সামনে বা পেছনে টেনে ঢোলের সুর ঠিক করা হয়। ঢোলের খোলটা মাঝখানে মোটা, দুই প্রান্ত একটু সরু থাকে। ভালো মানের কাঠ দিয়ে একটি ঢোল বানাতে ৮-১০ দিন সময়ও লেগে যায়।  

ঢোলের সঙ্গে দুর্গাপূজায় ঢাকের চাহিদাও থাকে। ঢাকের চেয়ে ঢোল আকারে ছোট হয়। ঢাক বাজানো হয় দুটি কাঠি দিয়ে একইপ্রান্তে। আবার ‘বাংলা ঢোল’ এর আকার সাধারণ ঢোলের চেয়ে বড় এবং আওয়াজ সাধারণ ঢোলের চেয়ে গম্ভীর।

এছাড়া ঢোলের চেয়ে ছোট বাদ্যযন্ত্র ঢোলক দেখতে একটি ছোট পিপার মতো। ঢোলকের দুইদিকের ব্যাস সমান, ঢেকে রাখা চামড়া তুলনামূলকভাবে পাতলা। ঢোলক বাজাতে কোনও কাঠি লাগে না, হাত দিয়েই বাজাতে হয়।  

পাথরঘাটার সুবর্ণা সুর প্রতিষ্ঠানের অমর চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যবসা কোনমতে টিকিয়ে রেখেছি। চামড়ার দাম, গাছের দাম ও কারিগরদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হয়। এবার ৬ জোড়া নতুন ঢাক-ঢোল তৈরি করেছি। এখন পুরাতন ঢোল মেরামত করছি।  

কারিগর সুবল দাস ও শান্ত দাস বলেন, অন্যান্য বছর বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢুলিরা ঢাক মেরামত ও বানাতে আসতো। সবাই তাড়াতাড়ি নিতে তাগিদ দিতো। এখন অবশ্য কারো তেমন তাড়াহুড়ো নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।