ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি ছাত্রলীগের কমিটি: পদধারীরাই বিপাকে

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
চবি ছাত্রলীগের কমিটি: পদধারীরাই বিপাকে ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর পদধারীদের কেউ মারধরের শিকার হয়েছেন। কেউবা আবার দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন ক্যাম্পাসের বাইরে।

শুধু তাই নয়, অনেকে পদ পাওয়া সত্ত্বেও পদবঞ্চিতদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর কেউ কেউ তো পদ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানানোরও সাহস করেননি।
এ ছাড়া কমিটিতে নিজে পদ পেলেও কর্মীদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় অনেক পদধারী নেতাই বর্ধিত কমিটির দাবিতে আন্দোলন করেছেন।  

দীর্ঘ ৪ বছর ৭ মাস ২৫ দিন পর গত ৩১ জুলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ। দিনের হিসেবে ১ হাজার ৬০৩ দিনের অপেক্ষার পর সোনার হরিণের মতো ধরা দিয়েছে চবি ছাত্রলীগের এ কমিটি। ৪২৫ সদস্যের বড় আকারের কমিটি দিয়েও নেতাকর্মীদের খুশি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যদিও কর্মীদের মন রক্ষার্থে লঙ্ঘন করতে হয়েছে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের নির্দেশনাও।  

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৬ নম্বর ধারার (সাংগঠনিক কাঠামো) ‘জ’তে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সাংগঠনিক জেলা হিসেবে গণ্য হবে এবং এর কমিটি হবে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। ধারা ১০ অনুযায়ী জেলা শাখায় সহ-সভাপতি হতে পারবেন ২১ জন। কিন্তু চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন ১১৮ জন।

জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কমিটিগুলো যেখানে ১৫১ সদস্যের হওয়ার কথা। সেখানে চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে অতিরিক্ত ২৭৪ সদস্য যুক্ত করে সমালোচিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়া সহ-সভাপতি পদে ২১ জনের জায়গায় অতিরিক্ত ৯৭ জনকে যুক্ত করে ১১৮ জনকে সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। তবে স্বস্তির জায়গা একটাই, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখেছেন চবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।  

এদিকে নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ পদবঞ্চিত হওয়ায় কয়েক দফায় আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায় চবি ছাত্রলীগের অনুসারীদের। দুই দফায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্ধিত হয়নি কমিটি, নেই কোনও সম্ভাবনাও।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক অনিক গোমস্তাকে হেনস্তা করতে দেখা যায়। এমন একটি ভিডিও ফুটেজ বাংলানিউজের হাতে এসেছে। এ সময় অনিক গোমস্তাকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ না করেও কীভাবে এবং কার সুপারিশে পদ পেয়েছে, এ বিষয়ে জেরা করতে থাকেন ছাত্রলীগের কয়েকজন অনুসারী। তবে হেনস্তাকারীরা পদবঞ্চিত নেতাকর্মী কি-না জানতে চাইলে অনিক গোমস্তা তাদের চেনেন না বলে জানান। এ ছাড়া গায়ে হাত তোলার গুঞ্জন শোনা গেলেও ভুক্তভোগী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

অনিক গোমস্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমার গায়ে হাত তোলেনি কেউ। কীভাবে এবং কার মাধ্যমে পদ পেয়েছি, এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছে শুধু। এর বেশি কিছু হয়নি।

পদ পেয়ে বিপাকে আছেন বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমনকিছু মনে হয় না আমার। সবকিছু স্বাভাবিকই আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া আরেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, পদ পেয়েছি ঠিক, তবে পরিচিত অনেক সিনিয়ররা পদবঞ্চিত হওয়ায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও পদবঞ্চিতদের আন্দোলনে অংশ নিতে হয়েছে। এমনকি পদ পাওয়ার পর ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসও দিতে পারিনি। যেহেতু এখন সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়, তাই সেখানে বিষয়টি জানাতে না পারাটাও একধরনের পরাধীনতা।

তিনি আরও বলেন, অনেক সিনিয়র এবং বন্ধুবান্ধব এখন বাঁকা চোখে তাকায়। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেয়ে যেন পদবঞ্চিতদের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছি।  

শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বাংলানিউজকে বলেন, জুনিয়রদের অনেকেই দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও পদবঞ্চিত হয়েছে। নিজে পদ পেলেও তারা বঞ্চিত হওয়ায় নিজের কাছে খারাপ লাগে। আমরা বেশ কয়েক দফায় কর্মসূচিও পালন করেছিলাম বর্ধিত কমিটির জন্য। কিন্তু এখনও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাই যতদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না, ততদিন পদধারীদের এমন বিপাকেই পড়তে হবে।

শাখা ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি ও বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ রেড সিগনালের (আরএস) নেতা রাকিবুল হাসান দিনার বাংলানিউজকে বলেন, পদধারীরা বিপাকে থাকার কারণ হলো- এমন অনেকে পদ পেয়েছেন, যারা ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেনি। আবার পদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র ক্রম বজায় রাখা হয়নি। এসব কারণেই মূলত পদধারী অনেকে বিপাকে পড়েছেন। কারণ লবিং করে পদ পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যায় না। যারা অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে পদ পেয়েছে, তারা এখন সেটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই সর্বশেষ চবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর দুই দফায় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিলুপ্ত করা হয় এ পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ১৯ মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে রেজাউল হক রুবেলকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই সদস্যের কমিটি দেওয়ার ৩ বছর ১৬ দিন পর অবশেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় চবি ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।