ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ক্রাইম পেট্রল-সিআইডি দেখেই আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
ক্রাইম পেট্রল-সিআইডি দেখেই আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত ও খুনি আবীর আলী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: ঘরের পাশের মসজিদে আরবি পড়তে ঘর থেকে বেরিয়েছিল পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত। এরপর ঘরে না ফেরায় হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছিল স্বজনরা।

তার সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। ১৪ নভেম্বর আয়াত নিখোঁজ হয়।
কিন্তু বেশ কয়েকদিন কোথাও সন্ধান মেলেনি। আয়াত নগরের ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে।

পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ইপিজেড থানায় জিডি করা হয়েছিল। তার দাদা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে আবেদন করেন নাতনির সন্ধান চেয়ে। এরপর আয়াতের সন্ধানে মাঠে নামে পিবিআই। এরপর আশেপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে আর স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে কথা বলে আয়াতের ভাড়াটিয়ার ছেলে আবীর আলী (১৯) আটক করা হয়। টানা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আবীর আয়াতকে খুন করে মরদেহ ছয় টুকরা করে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য দেয়।  

পিবিআই জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভাড়াটিয়া থাকায় আয়াতের বাসায় সবার সাথে সম্পর্ক ছিল আবীরের। এ সুযোগ কাজ লাগিয়ে সে তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। ১৪ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় আয়াত। ওই সময় আবীর তাকে কোলে নেয়। যেটা ওই এলাকায় খেলাধুলা করা অন্য শিশুরাও দেখেছিল। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায়ও সেটি দেখা গেছে। এরপর তাদের নিচতলায় বাবার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায় আবীর। সেখানেই আয়াতকে শ্বাসরোধে খুন করে আবীর। তারপর শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় সে।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) আবীরকে নিয়ে পুলিশ নগরের আকমল আলী সড়কের স্লুইস গেট সংলগ্ন নালায় এবং পরবর্তীতে আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকার সমুদ্র পাড়ে যায়। তবে ‘সাগরের পানিতে’ ভেসে যাওয়ায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। আকমল আলী সড়কে তার মায়ের বাসার সামনে একটি ঝোপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি উদ্ধার করে। এছাড়া আয়াতের বাসার পাশে কবরস্থানে আয়াতের পায়ের স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার জানান, আবীরকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে যে বেশকিছু দিন ধরে সে পরিকল্পনা করেছিল আয়াতকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার। ওই জন্য রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিমও সে সংগ্রহে রেখেছিল। যাতে ওই নম্বর থেকে ফোন করে টাকা দাবি করতে পারে। কিন্তু সিমটি সচল না থাকায় সে আর ফোন করতে পারেনি।

তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করলেও আবীর পুলিশকে বিভ্রান্ত করারও চেষ্টা করেছিল। তবে আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতেই মূলত সে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত স্বীকার করে আলামত কোথায় আছে তা পুলিশকে জানায়।

আবীর পুলিশকে জানায়, মা-বোনকে আয়াতের বাসায় পাঠিয়ে সে রাতে একটি কাটার ও কিছু পলিথিন কেনে। কাটার দিয়ে আয়াতকে কেটে টুকরো করতে না পেরে বাসায় থাকা বঁটি দিয়েই শরীর থেকে হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর পলিথিনে মুড়িয়ে স্কচ টেপ দিয়ে পুনরায় মালামাল রাখার শেডে রেখে দেন। পরদিন সকালে ও রাতে সাগর সংলগ্ন একটি নালায় তিনটি করে ছয়টি প্যাকেট ফেলে দেয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, আশপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আর স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেশী আবীরকে আটক করা হয়। তাকে বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে আয়াতকে খুন করে মরদেহ ছয় টুকরো করে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য জানায়।

পুলিশ সুপার জানান, আবীরের বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তার মা আকমল আলী সড়কের পকেট বাজার এলাকায় আলাদা একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন। তবে বাবা এখনও আয়াতদের বাড়িতেই থাকেন।

সে জানিয়েছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’ও ‘সিআইডি’ তার পছন্দের সিরিয়াল। মূলত সেসব অনুষ্ঠান দেখেই মুক্তিপণ আদায়, মরদেহ গুম, আলামত নষ্ট সবকিছুই সেখান থেকে শিখেছে বলে জানিয়েছে আবীর।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
পিডি/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।