ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বরিশালে ইলিশ মোকাম সরগরম, তবে বরফ নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

কাওছার হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১০
বরিশালে ইলিশ মোকাম সরগরম, তবে বরফ নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

বরিশাল: রূপালী ইলিশে সয়লাব বরিশালের ইলিশ মোকাম। সাগরে নিম্নচাপ ও টানা বর্ষণের প্রভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আটকা পড়ছে জেলেদের জালে।

গত দু’দিনে দুই হাজার মণের অধিক ইলিশ এসেছে বরিশাল মোকামে। এর ফলে দামও কমেছে  মনপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
তবে পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় সাগর ও নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও সংরণ করা যাচ্ছে না। ফলে মৌসুমের শেষে বেশুমার ইলিশ ধরা পড়ায় মহাখুশি হয়ে ওঠা জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মুখের হাসি শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিতে যাচ্ছে বরফ সংকট।

এ নিয়ে এখন ইলিশ বোঝাই আড়ৎগুলোর মালিক-মহাজনরা রয়েছেন চিন্তায়।

ব্যবসায়ী নিরব হোসেন টুটুল বাংলানিউজকে জানালেন, দুইদিন আগেও ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশের মন ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকায়। এছাড়া ৮শ’ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার, ৬শ’ গ্রাম ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার এবং জাটকা ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে বরিশালের ইলিশ মোকাম (পোর্ট রোড মৎস অবতরণ কেন্দ্র) ঘুরে দেখা গেছে, সাগর ও নদী থেকে আসা প্রায় শতাধিক ট্রলার থামানো রয়েছে মোকাম ঘিরে। সামনে গিয়ে দেখা গেল প্রতিটি ট্রলারই ইলিশে বোঝাই। কোনটি থেকে ঝাঁকায় ঝাঁকায় ইলিশ নামানো হচ্ছে। আড়তগুলোর সামনের জায়গাগুলো ইলিশের স্তুপে ঢেকে গেছে। ফাঁকা জায়গা কোথায়ও নেই।

ইলিশ টানায় ব্যস্ত শ্রমিক রফিক ও আজম জানালেন, টানা দুইদিন বিশ্রাম নিতে পারছেন না তারা। নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলেই গেছেন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রলার থেকে মাছ খালাস করতে হয়। আবার বিক্রি হওয়া মাছ ট্রাকে তুলে দিতে হচ্ছে পরণেই।

ব্যবসায়ী টুটুল জানালেন, এখানে ২৫৭টি আড়ৎ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড়তগুলোতে ২ হাজার মণের উপরে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ এসেছে। এর ফলে দাম কমে গেছে অনেক।

টুটুলসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বরফের জন্য আপে করতে দেখা গেল।

জানা গেল সাধারণ সময়ে ১ ক্যান বরফ পাওয়া যায় দেড় শ’ টাকায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সেই বরফ আড়াই শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পরে আড়তদারদের প্রতিবাদের মুখে বরফকল সিন্ডিকেট তা ২৩০ টাকায় নামিয়ে আনে। শুক্রবার এ দামেই বরফ বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ী জামাল হোসেন খান জানান, লোড-শেডিং ও সিন্ডিকেটভুক্ত বরফকল মালিকদের রোটেশন প্রথার কারণে মণকে মণ মাছ পচতে থাকলেও প্রয়োজনীয় বরফ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক মাছ লবণ দিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে লবণ দেওয়া মাছের স্বাদ কমে যায়, ফলে দামও কমে যায়।

জামাল বললেন, ‘এছাড়া ৬ মাস যাবত ভারতে ইলিশ রফতানিও বন্ধ রয়েছে। ’

এদিকে বরিশাল বরফকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারক সিকদারকে বরফকল মালিকদের সিন্ডিকেট বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আগে দেখা যেত মাছ ব্যবসায়ীরা কোনও একজন বরফকল মালিকের বিপুল টাকা বাকি রেখে অন্য ব্যসায়ীর কাছ থেকে বরফ নেওয়া শুরু করছে। এতে করে মোকামে বরফকল মালিকদের বিপুল টাকা আটকে থাকতো।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বরিশালের ১২টি বরফকল মালিকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন শুধুমাত্র ১জন করে বরফ উৎপাদন ও বিক্রির নিয়ম চালু করা হয়।

ফারুক সিকদার বললেন, ‘এটাই রোটশেন পদ্ধতি। এতে পাওনা টাকা মার যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন বরফকল মালিকরা। ’

তবে আড়তদার আর বরফকল মালিকদের রশি টানাটানির দিকে খুব একটা নজর নেই ৩ নং সতর্ক সংকেতের মুখেও ইলিশ শিকারে সাগরে যাওয়া অকুতোভয় জেলেদের। দাম বাড়া-কমার বিষয়টি তাদেরকে খুব একটা ভাবিত করতে পরছে না।

তেমনি এক ব্যস্ত জেলে আফতার উদ্দিন জানান, সাগরে নিম্নচাপের ফলে গভীর পানির ইলিশ উপরে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে ছুটছে।

‘কারণ এরপর মাসের পর মাস বসে বসেই কাটাতে হবে, সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়া আর মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে,’ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন জেলে আফতার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।