ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিদেশিদের দখলে ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজার

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১০
বিদেশিদের দখলে ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজার

ঢাকা: বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজারের পুরোটাই বিদেশিদের দখলে রয়েছে। এর একটি বড় অংশ কব্জা করেছে ভারত।

বাকিটা চিন-জার্মানির দখলে।

এ আমদানি নির্ভরতায় দেশি ব্যবসায়ীরা যেমন স্বনির্ভর হতে পারছেন না, তেমনি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল  অঙ্কের রাজস্ব।          

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈদ্যুতিক পণ্যের চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মেলা ঘুরে এ হতাশাব্যঞ্জক চিত্রই দেখো গেছে।

দেশীয় স্টলগুলোতে থরে থরে শোভা পাচ্ছে সুইচ, সকেট, মালটি কার্ড, এলটি সুইচ গিয়ার, মেইন সুইচ, ক্যাবল, ফ্যান, লাইট ফিটিংস, অ্যানার্জি সেভিং বাল্ব, মিটারসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক পণ্যসামগ্রী। অথচ বিদেশি স্টলগুলোতে ছিল এসব পণ্য তৈরির কাঁচামাল ও অত্যাধুনিক সব যন্ত্র।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ)’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া এ নিয়ে আক্ষেপ করতে ছাড়লেন না।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকার। অথচ আমাদের বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মেশিনই শুধু কিনতে হয় বাইরে থেকে। ’

স্বল্প সুদে ঋণের অভাব, সরকারি নীতিমালার জটিলতা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার কারণে দেশে এসব যন্ত্রপাতি (মেশিন) তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।    

মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘২০ বছর আগে বৈদ্যুতিক পণ্যের ৮০ শতাশ আমদানিনির্ভর ছিল। সে অবস্থা আর আজ নেই। তবে এসব বৈদ্যুতিক পণ্য তৈরির মেশিনগুলো এখনও আমদানি করতে হচ্ছে। ’

তবে এ খাতে বড় ধরনে বিনিয়োগ হলে নিজেরাই এসব যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন বলে মনে করছেন মাইনুল। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের নানা বাধা দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়াও দেশের আমলাতন্ত্র বিদেশি বিনিয়োগের একটি অন্যতম বাধা। ’  

ম্যাক্রো কেবল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএ জলিল বলেন, ‘এসব মেশিন তৈরির প্রযুক্তি, লোকবল কিংবা অর্থ কোনোটিই আমাদের নেই। তবে সরকারের সুদৃষ্টি, অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে দেশেই এ ধরনের মেশিন তৈরি করা সম্ভব। ’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনে দেশে প্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার এ কারখানা রয়েছে।

তবে এর বেশিরভাগই বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয়। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মাত্র ৮ শ’।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশীয় ফ্যান ইন্ডাস্ট্রির পাওয়ার প্রেস, ওয়ারিং মেশিন, বড় লেদ মেশিন, শেয়ারিং মেশিন, অ্যানার্জি সেভিং বাল্ব তৈরির যন্ত্রের বেশিরভাগই আসে ভারত থেকে।

এছাড়া চিন ও জার্মানি থেকেও মেশিনারিজ আসে। অ্যানার্জি সেভিং বাল্ব তৈরির মেশিনারিজের মধ্যে টুল রুম মিলিং মেশিন, ওয়ার্কিং প্ল্যাটফরম, সারফেস গ্রিন্ডিং মেশিন, বেড টাইপ মিলিং মেশিনের প্রায় পুরোটাই আসে জার্মানি থেকে।

এছাড়া কেবল পণ্য তৈরির একশ’ভাগ মেশিনারিজ ভারত থেকেই আসে।

কেবল পণ্যের যন্ত্রের মধ্যে বিদেশ থেকে আনা হয় হ্যান্ডেলিং গিয়ার, মিলিং মেশিন, ডাবল কলাম ড্রয়িং প্রেস, একসেনট্রিক প্রেস, মেশিনিং সেন্টার, মিলিং ডিভাইস, চাকিং অটোমেটিক লেদ মেশিন।  

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামালও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

লোহার উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, যে লোহা ভারতে ৪০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় বাংলাদেশে তা ৬০ হাজার টাকায় কিনতে হয়। সেইসঙ্গে আছে ভ্যাট ও ট্যাক্সের প্রতিবন্ধক নীতিমালা।

তবে সরকার থেকে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই বলেন, ‘এ ব্যাপারে যত ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন হয় তার সবই দেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৪২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।