বহির্বিশ্বে তৈরি সংকট দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যহত করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে কঠিন করে তুলেছে।
শনিবার ( ৮ জুন) বিকেলে শের ই বাংলানগরে বিআইডিএস মিলনায়তনে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ও বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যমেয়াদী প্রেক্ষিত শীর্ষক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিনয়ক সেন বলেন, একেক উন্নয়নশীল দেশ একেক ধরনের উন্নয়ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যায়। ২০১০ এর দশক গেছে আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের পেছনে। এরপর আমাদের সময় এসেছিল মানবউন্নয়নমুখী উন্নয়নের। কিন্তু যে ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই , সেই রাশিয়ার-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে আমাদের মানবউন্নয়নমুখী উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে।
রংপুর থেকে 'অতি দারিদ্র্য' চলে গেছে। খুলনাকে এখন চেনা যায় না, আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, '৯০ এর দশকে আমরা গ্রামীণ অবকাঠামো করলাম। ২০১০ দশকে করলাম বড় ধরনের অবকাঠামো। এখন আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ ডিজিটাল ডিভাইজ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
এক নাগাড়ে চারবার ঋণ নবায়ন করা ঠিক নয় বলে মত দেন বিয়নক সেন। বলেন, পরপর চারবার পুনঃতফসিল করতে দীর্ঘ সময়ের দরকার হয়। এ সময় বৈশ্বিক অভ্যান্তরীণ পরিস্থিতি অনেক বদল হয়। চারবার পুনঃতফসিলি করলে সেটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। ঋণ পুনঃতফসিল দুইবারই যথেষ্ট।
প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদার করার ধরনটি সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিআইডিএসের এই মহাপরিচালক। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে গ্রাহকের বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত আয় হতে পারে। এক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া দরকার। তবে অপ্রদর্শিত আয়কে প্রদর্শনের সুযোগে একেবারে ট্যাক্স মওকুফ করা কিংবা একটি নির্দিষ্ট রেট বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নই আমরা। আমাদের অবস্থান মধ্যবর্তী।
তিনি বলেন,অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে ট্যাক্স রেট বেঁধে দেওয়া আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। এই হার অবশ্যই গ্রাহকের সম্পদের পরিমাণের ওপর হওয়া উচিত। সেটা হতে পারে ১৫ শতাংশ, আবার হতে পারে ২০, ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স বেঁধে দেওয়া কর ন্যায্যতার খেলাপ বলে মনে করি।
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে না উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি কৃষিবিদ ড. এমএ সাত্তার মন্ডল।
তিনি বলেন, যে কৃষকের তাৎক্ষণিক টাকার দরকার প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে তিনি ঋণ পাচ্ছে না। তাই দ্বারস্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর কাছে। সেখানে তারা পেয়েও যাচ্ছে। কৃষি কাজ করতে এখন দরকার দ্রুত নগদ টাকা। এ টাকা পেতে বাড়তি সুদ লাগলেও কৃষক উপকৃত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকের টাকার এনজিও-এর মাধ্যমে বাড়তি সুদ নিলেও কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদ হার বাড়ানো হয়েছে। এর সুফল পেতে হলে ব্যাংকিং খাতকে আরও দক্ষ হওয়ার পরামর্শ দেন বিআইডিসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসাইন। তিনি বলেন, পশ্চিমাদের ঋণের কাঠামো ভোক্তা ঋণের পরিমাণ বেশি, কিন্তু শিল্প ঋণের পরিমাণ কম। যে কারণে সুদ হার বাড়িয়ে দ্রুত কাজে দিয়েছে। বাংলাদেশে ঋণের কাঠামোর উল্টো হওয়ার কারণে ফল দ্রুত হয়তো দেবে না। তবে সুদ হার বাড়ানোর ফলে এর প্রভাব আছে। ধীরে হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়বে, মানুষ খবচ করতে সংযমী হবে, মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
প্রতিবছর কৃষি ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে-এটা প্রমাণ করে, এমন মন্তব্য করেন বিআইডিএসের অপর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
তিনি বলেন, কৃষি দ্বিতীয় পর্য়ায়ে লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। উৎপাদন করে যাতে কৃষক তার ফসলের দাম পান, উৎপাদন খরচ যাতে বৃদ্ধি না পায় সে দিকে সৃষ্টি দিতে হবে।
স্থানীয় শিল্প শুরু হয়েই হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বাজেটে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচাল ড. কাজী ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক ও রেফ্রিজারেটরের মত শিল্পকে সহায়তা দেওয়া হয়ে আসছে। বাজেটে সহায়তা থেকে বের হওয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা,জুন ৯,২০২৪
জেডএ/এমএম