ঢাকা: কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এবার লালবাগের পোস্তায় ব্যবসায়ীদের চামড়া সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখের কাছাকাছি। ঈদের প্রথম দিনেই চামড়া সংগ্রহের সে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ করে ফেলেছেন কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১৭ জুন) রাতের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ চামড়া কিনে লবণ লাগিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আজ দ্বিতীয় দিনে ১৫ শতাংশ ও আগামী বুধবার (১৯ জুন) ঈদের তৃতীয় দিনে ৫ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হবে। ঈদের পঞ্চম দিন থেকে লবণজাত করা এ চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি শুরু করবেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে পোস্তার বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, কোনো আড়তেই চামড়ায় লবণ লাগানোর ব্যস্ততা নেই। প্রায় প্রতিটি আড়তেই লোকজন শূন্য। কোনো কোনো আড়তে চামড়ার পাশেই শ্রমিকদের ঘুমাতে দেখা গেছে।
অতীতে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চামড়া কেনাবেচার ব্যস্ততা দেখা গেলেও এবার একেবারে বিপরীত চিত্র। চামড়া ঘিরে কোনো ব্যস্ততা নেই। দুয়েকটি ট্রাক এলেও চামড়া দিয়ে চলে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে ভালো দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। সোমবার যে চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ সেই চামড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। আবার চামড়ার মান থাকলে আরও ভালো দাম দিয়ে কিনছেন ব্যবসায়ীরা।
চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে বলে জানিয়ে কাঁচা চামড়া কেনা ও লবণ লাগানো ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাউড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএইচএসএমএ) চেয়ারম্যান আফতাব খান বলেন, পোস্তায় ব্যবসায়ীদের এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখের কাছাকাছি চামড়া সংগ্রহ করা। আমরা সেই অনুযায়ী লবণ কিনে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পোস্তায় আড়তদার, ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে ঈদের প্রথম দিনেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করেছেন। রাত ৯টার মধ্যেই চামড়া কেনা শেষ হয়। এমন কী সোমবার রাতের মধ্যেই লবণ লাগানো হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিনে ১৫ শতাংশ ও আগামী বুধবার ঈদের তৃতীয় দিনে ৫ শতাংশ সংগ্রহ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ চামড়া আমাদের কাছে এসেছে। কিছু চামড়া হেমায়েতপুরে লবণজাত করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চামড়া লবণজাত করেছেন ট্যানারি মালিকরা। ফলে ঢাকায় চামড়া নষ্ট হয়নি। সোমবার চামড়ার যে দাম ছিল তার তুলনায় আজ ভালো দাম পাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, পোস্তায় আগের মতো ব্যবসায়ী নেই। নানা সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এমন কী পোস্তা এলাকা যে গোডাউনগুলো ছিল সেগুলো এখন আগের মতো নেই। কারণ একজন চামড়া ব্যবসায়ী যে গোডাউনের ভাড়া দিতেন ৪০ হাজার টাকা এখন সেই একই গোডাউন কয়েকগুণ বেশিতে ভাড়া নিয়েছেন প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী এখন চামড়া কিনতে পারেন না। ফলে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম হাজারীবাগে পুরোনো ট্যানারির কারখানাগুলোতে চামড়ায় লবণজাত করার সুযোগ দিতে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিক আমাদের সেই অনুমতি দেয়। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এখন হাজারীবাগেও চামড়ায় লবণজাত করেছেন। স্বল্প সময়ের জন্য অনুমতি পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চাহিদা মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারায় সহজেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
পোস্তার অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সংগ্রহ করা চামড়া লবণজাত করার কয়েকদিন পর তারা গুদামজাত করবেন। ঈদের পঞ্চম দিন থেকে তারা লবণজাত করা চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি শুরু করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৪
ইএসএস/আরবি