ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এনবিআরের কৌশলগত বাধায় খরচ বাড়ছে, জনপ্রিয় হচ্ছে না সৌরবিদুৎ

মসিউর আহমেদ মাসুম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০
এনবিআরের কৌশলগত বাধায় খরচ বাড়ছে, জনপ্রিয় হচ্ছে না সৌরবিদুৎ

ঢাকা: যন্ত্রপাতি আমদানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কৌশলগত শুল্কায়নে বেড়ে যাচ্ছে সৌরবিদুৎ স্থাপনের খরচ। তাই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বাড়তি খরচের ভয়ে সৌরবিদুৎ সংযোগ নিচ্ছেননা অনেকেই।



ফলে গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ ও ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ল্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খোদ প্রধানমন্ত্রী নবায়নযোগ্য জ্বালানি তথা সৌরবিদুৎ জনপ্রিয় করতে এর ওপর সকল ধরনের কর মওকুফ করার ঘোষণা (২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি) দিলেও সৌরবিদুৎ যন্ত্রপাতির ওপর নানাকৌশলে শুল্ক ধার্য করে রেখেছে এনবিআর।

এ পরিস্থিতিতে গত ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‘সেচব্যবস্থায়  নবায়নযোগ্য জ্বলানির প্রযুক্তি ব্যবহার’ শীর্ষক এক সেমিনারে সৌরবিদুৎ এর ওপর সকল শুল্ক তুলে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

তবে এনবিআর থেকে বলা হচ্ছে, সোলার প্যানেলের ওপর সকল প্রকার শুল্ক শূন্য (০) করা আছে।

কিন্তু সোলার প্যানেলের কাঁচামাল আমদানিতে এইচএসকোড সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া, বন্দরে শুল্ক কর্মকর্তাদের হয়রানি ও প্যানেল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক থাকাকে আমদানিকারকরা কৌশলগত বাধা হিসেবে দেখছেন।

আমদানিকারকরা বলছেন, শুধু সোলার প্যানেল আমদানি ও প্যানেল তৈরির কিছু কাঁচামাল  শুল্কমুক্ত হলেও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক আরোপ করা আছে।

বাংলানিউজকে তারা জানান, এনবিআরের এসআরও (স্ট্রেচোটোওরি রোলস অ্যান্ড অর্ডার) অনুযায়ী প্যানেল তৈরি ও সংশ্লিষ্ট ১৪টি যন্ত্রের শুল্ক শূন্য হলেও আরো কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে এসআরওতে কোনো কিছু বলা নেই। তাই ক্ষেত্রবিশেষে এগুলোর ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলুমেনিয়াম ফ্রেম, ব্রেক শিট, ফ্রন্ট শিট, ইথানাইল ফিনাইলেন এসিটালিন, কানেক্টর রিবন বাসবার, ফিলেন পিভি ইত্যাদি।

এসবের বাইরে প্যানেল ছাড়া আলাদা ব্যটারি আমদানি করলে ৫৯ শতাংশ, প্যানেলের সঙ্গে আমদানি করলে ৩ শতাংশ (যদিও একসঙ্গে আনা যায় না) এবং ইনভাটর, সেচ ব্যবস্থার জন্য সাব ম্যাগনেজিবল পাম্প ও সার্চ কন্ট্রোলারে ৩ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) ও এটিভি (অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট)।

৩ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে এগুলো যোগ করলে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, ৫৯ শতাংশের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ও ক্ষেত্রবিশেষে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হয় বলে বাংলানিউজকে জানান শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এমএ তাহের।

তিনি আরো জানান, এসআরও নম্বর- ১৫৫ অনুযায়ী জাঙ্কশান বক্স এর এইচএকোড শুরু ৩৯ দিয়ে। কিন্তু জাঙ্কশান বক্স যেহেতু ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র তাই এ কোড ৮৫ দিয়ে শুরু হওয়ার কথা। যন্ত্রপাতির এইচএকোডের এই সামঞ্জস্যতার ভিন্নতার কারণে আমদানিকারকরা শুল্ক কর্মকর্তাদের কাছে হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন।

ব্যাটারি বিতর্ক: সৌর বিদুৎ তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাটারি।

এনবিআর বলছে, দেশিয় শিল্প টিকিয়ে রাখতে ব্যটারি আমদানিতে শুল্ক শূন্য করা না হলেও প্যানেলের সাথে আমদানীতে মাত্র ৩ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকদের এই ‘প্যানেলের সাথে’ শব্দটি নিয়েই আপত্তি। কারণ, প্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যাটারি আনা যায় না। প্যানেল ও ব্যাটারি আলাদা থাকে। আর আলাদা হলেই ৫৯ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সোলার এনার্জি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুকনোজ্জামান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত ব্যাটারিতে সমস্যা বেশি। এক মাস পর পর এসিড বদলাতে হয়। আর এর স্থায়িত্ব ১ বছরের বেশি হয়না। ব্যটারির জন্য একটি সোলার প্যানেলের অর্ধেক খরচ বেড়ে যায়। ফলে খরচের ভয়ে অনেকেই নতুন করে ব্যাটারি নিতে চায় না। যদি  ‘মেইনটেন্যান্স  ফ্রি জেল ব্যটারি’ শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা যেত, তাহলে সৌর বিদুৎতে খরচ অনেক কম হত। গ্রহকরাও উৎসাহী হত। ’

ব্যাটারির ওপর শুল্ক শূন্য হলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কমে যাবে স্বীকার করে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যাটারি আমদানী শুল্কমুক্ত হলে খরচ কমবে। তবে দেশীয় শিল্পকেও বাঁচাতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad