ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রভিশন বাড়ল

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে প্রভিশন বাড়ল

ঢাকা: ব্যাংকের গ্রাহকদের অর্থ দিয়ে কোনভাবেই ঝুঁকি নিতে রাজী নন বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিপোজিট বা ব্যাংকের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে এ জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে  শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে বুধবার নতুন করে আরও একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। ফলে এখন থেকে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোন অশ্রেণীকৃত ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করবে। একই সঙ্গে প্রতি তিনমাস পর পর শেয়ারবাজার সম্পর্কিত সকল ঋণের হিসাব প্রদান করবে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

কোন ব্যাংক যদি এ নির্দেশ অমান্য করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার, ডিলারসহ সংশ্লিষ্টদের ঋণ বিতরণ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে  কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এসব বিষয় উল্লেখ করে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সকল তফসিলী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বরাবরে পাঠানো হয়েছে। অবিলম্বে এ নির্দেশ কার্যকর করা হবে বলেও ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।

সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাজার স্থিতিশীল নয়। এটি প্রতিনিয়তই পরিবর্তন (ওঠানামা) হয়। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে যেমন খুব অল্প সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব তেমনি এখানে অধিক ঝুঁকিও রয়েছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক কোম্পানি থেকে কোন স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত স্টক ডিলার, শেয়ার ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে গঠিত নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে অশ্রেণীকৃত যে কোন পরিমাণ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এসব প্রভিশন রাখা হবে। আগে ১ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখা হতো।
একই সঙ্গে কোন ব্যাংক শেয়ারবাজার সংক্রান্ত লেনদেন করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংকিং বা ব্রোকারেজ হাউস এবং স্টক ডিলারদের যে পরিমাণ অশ্রেণীকৃত ঋণ প্রদান করবে তা প্রতি তিনমাস পর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে জানাতে হবে।

এদিকে শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলো। অতিরিক্ত বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও তা তেমন কাজে আসছে না। ব্যাংকের মোট দায় বা মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ থাকলেও ১০টি ব্যাংক সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে।
যদিও শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ডেড লাইন বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু সে ডেডলাইনও হয়ত কার্যকর করা হবে না বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ লক্ষ্যে নতুন করে আবার নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক শেয়ারবাজারে মোট দায়ের বা মূলধনের ১০ শতাংশের অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে। এরমধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক শেয়ারবাজারে ১২.০২ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১৭.৭৭ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংকের রয়েছে ১৬.৬৫ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক তার মোট দায়ের ১১.২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১২.৬৫ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ১৪.৪৯ শতাংশ, স্টান্ডার্ড ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ১২.৬১ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ২১.৯০ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের মোট দায়ের ২৭.৭৪ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ১৯.৩৭ শতাংশ।
এছাড়া নতুন করে আরও কিছু ব্যাংক শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করছে তাও বাংলাদেশ ব্যাংক খতিয়ে দেখছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এসকে সুর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমানো, ডিপোজিটরদের টাকা রক্ষা করা এবং যে কোন বিপর্যয়ের হাত থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করাই হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। সে হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি কিছু কিছু ব্যাংকের শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছে।   বৈঠকে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গত মাসের তথ্য অনুযায়ী মোট ১০টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে (অর্থাৎ  মোট দায়ের ১০ শতাংশের বেশি) শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরই বেশ কিছু ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলোর ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে আগামী নবেম্বরের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করবে অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে।
কোন ব্যাংক যদি এ নির্দেশনা অমান্য করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।