গাড়ীর বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ হালনাগাদ করা না থাকলে রুট পারমিট এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট বাতিলের বিধান আছে। ফলে গাড়ী মালিকরা সড়ক দুর্ঘটনাজনিত বীমার প্রিমিয়াম নিয়মিত পরিশোধ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনের বেশী। বীমা অধিদপ্তরের উপ-নিয়ন্ত্রক মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বীমা পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানির সংখ্যা ছিল মোট ৪৩টি। এরপর ২০০০ থেকে ২০১০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৬২ তে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বীমা দাবী পরিশোধের ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর টালবাহানার ব্যাপারে সব কোম্পানি নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তগুলো পূরণ করা থাকলে বীমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা হওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে পারে না বলে দাবীর অর্থ পায়না।
বীমা কোম্পানিগুলোর পাল্টা প্রশ্ন, গাড়ির ক্রটি, ভুয়া বা জাল লাইসেন্সধারী চালকের গাফিলতি কিংবা শর্ত পূরণ না করার দায় বীমা কোম্পানি নিতে যাবে কেন ? সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, গাড়ীর হাল নাগাদ বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ থাকলে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির যাত্রীরাই কেবল বীমা সুবিধা লাভ করবেন। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্ধারিত ‘ক ফরম’ পূরণ করে তা সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানির কাছে পৌঁছানোর নিয়ম রয়েছে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পালন করা হয় না। কেউ কেউ এক-দেড় মাস বিলম্বে ‘ক ফরম’ পূরণ করে বীমা অফিসে পাঠান। এছাড়া পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, নিহত যাত্রীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, পরিচিতি ও যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণ পৌঁছানোর ব্যাপারে নানা দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়।
বীমা কর্মকর্তারা আরও জানান, বীমা অফিসে সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি জমা দেওয়া হয় না বলে ক্ষতিপূরণ দাবিদারদের অধিকাংশ ‘অভিযোগ’ শুরুতেই বাতিল হয়ে যায়। তারা সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের বীমা দাবী পরিশোধের জন্য সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্থদের বীমা দাবী পরিশোধে জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব
বীমা কোম্পনিগুলোর কঠিন কঠিন শর্ত আরোপের নামে ও নানা অজুহাতে ক্ষতিগ্রস্থদের বীমার অর্থ পরিশোধ না করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেখানে সবচেয়ে বড় সত্য, সেখানে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম অজুহাত অমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য। গাড়ির ত্রুটি বিচ্যুতির কারণ দেখিয়ে কিংবা নানা টালবাহানায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া কোনো যুক্তি হতে পারেনা।
রুস্তম আলী খান মনে করেন গাড়ির ক্রটি কিংবা জাল লাইসেন্সধারী চালকের দায়দায়িত্ব দুর্ঘটনায় হতাহত যাত্রীর ওপর বর্তানো উচিত না। এ সকল দায় সংশ্লিষ্ট গাড়ি মালিক ও চালকের ওপরই বর্তানো উচিত।
তিনি বীমা সুবিধা পাওয়ার জন্য সহজ নিয়ম কানুন প্রবর্তনসহ ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
অর্থ ও যোগযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো বীমা কোম্পানির কাছে নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের কল্যাণের জন্য সরকারি তহবিলে টাকা জমা রাখতে হবে। বিআরটিএ, পুলিশ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় কল্যাণ তহবিল গঠনের পাশাপাশি সারাদেশের জেলা পর্যায়ে এর শাখা কমিটি গঠন করতে হবে।
জাতীয় কমিটির তদন্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতেই সহজ পদ্ধতিতে তাৎণিকভাবে হতাহতদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন রুস্তম আলী খান। এছাড়াও ক্ষতিপূরণের অর্থ ২০ হাজারের পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১০