ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য

ফিরোজ আমিন সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১০
ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথমবারের মতো কমলা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গেছে। স্বাদ ও মানের দিক থেকে এখানকার কমলা উন্নত হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন কমলা চাষে।

তবে এখন প্রয়োজন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন এবং চাষ সম্প্রসারণে সরকারি উদ্যোগ।

সরেজমিনে জানা যায়, সদর উপজেলার চৌরঙ্গীবাজার দণি বটিনা গ্রামের কানাই লালের বসতবাড়ির পাশে ১০ শতক জমিতে লাগানো ৪০টি নাগপুরি ও খাসিয়া ম্যান্ডারিন জাতের গাছে প্রথম বারের মতো যে কমলা এসেছে স্বাদে-মানে তা অতুলনীয়।

২০০৬-০৭ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঠাকুরগাঁও সদর ও রাণীশংকৈল এ দু’উপজেলায় কমলা চাষের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় দেওয়া হয় ৪ হাজার ১৪০ জন কৃষাণ-কৃষাণী এবং ১২০ জন কৃষি কর্মকর্তাকে প্রশিণ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৫টি ব্লক প্রর্দশনী ও ৩ হাজার ৭শ ৭৫টি বসতবাড়ি ব্লক স্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, এরই মধ্যে কৃষাণ ও কৃষাণীদের মধ্যে ৭ হাজার ৭৪০টি ঘাষিয়া ম্যান্ডারিন জাতের চারার সঙ্গে সার কিটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ ও রোপন করা হয়েছে। অভিজ্ঞতা দিতে তাদের ঘুরিয়ে আনা হয় সিলেটের বিভিন্ন কমলা বাগান।

উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য জায়গার তুলনায় আমাদের ঠাকুরগাঁও সদর ও রাণীশংকৈল উপজেলার মাটির উর্বরতা ভালো। কমলা চাষে মাটির  জাত হিসেবে বেলে ও দো-আঁশ মাটি কমলা চাষের উপযোগী এখানে তা পাওয়া যায়। ’

তিনি আরো বলেন, ‘কমলা চাষে হালকা অম্ল ভাবাপন্ন মাটি প্রয়োজন হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় চুন ব্যাবহার করা হয়। ঠাকুরগাঁও কমলা প্রকল্প উদ্যানে ৬২৫০০ চারা উৎপাদন করা হয়েছে। সাধারণত কমলা চাষের জন্য ১৬ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাসম্পন্ন ঠাণ্ডা আবহাওয়া প্রয়োজন, যা এ অঞ্চলে পাওয়া যায়। ঠাকুরগাঁও সদর ও রাণীশংকৈল উপজেলায় মোট আবাদ হয় ১৩০ হেক্টর। ফল উৎপাদন গড়ে প্রতিটি গাছে ২শ কমলা। ’

এই উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জেলার আরো ৩টি উপজেলায় কমলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখা গেছে। এখানকার কমলা খেতে সুস্বাদু ও রসালো, তাই ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণ ছাড়াও কমলা চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে। ’

সদর উপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার হরিপদ জানান, তার একটি কমলা গাছে এবার কমলা ধরেছে প্রায় ১ হাজার। তাই এবার তিনি আরো দেড় হাজারটি কমলার চারা রোপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

সেনিহারি গ্রামের লুৎফর রহমান জানালেন, এ ফসল তাকে নিজের ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখাচ্ছে।   কমলা চাষে এই সাফল্যের পর এ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

লুৎফর রহমান তার বাড়ির ৬৬ শতাংশ জমিতে কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড এভালুয়েশন অফিসার মমিন উল্লাহ জানান, কমলা চাষে তারা সংশ্লিষ্ট অনভিজ্ঞ কৃষকদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছেন তা এক কথায় অসাধারণ।

কমলা চাষ এ অঞ্চলের পুরো চেহারায় পরিবর্তন আনবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।