ঢাকা: প্রচলিত শ্রমবাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা, বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলোর সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর উপায় অনুসন্ধানে নামছে বাংলাদেশ। এজন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) অধীন ‘শ্রমবাজার গবেষণা ইউনিট’ নামে একটি নতুন শাখা খোলা হচ্ছে।
নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মার্কেট রিসার্চ ইউনিট বা বাজার গবেষণা ইউনিট শ্রমিক প্রেরণের জন্য নতুন শ্রমবাজার হিসেবে সম্ভাব্য দেশগুলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করবেন।
পাশাপাশি যে সব সমস্যার কারণে পুরনো বাংলাদেশি শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করবে বলে বিএমইটি জানিয়েছে।
এ ইউনিট ‘জনশক্তি মার্কেটিং ও প্রচারণা’ বিষয়েও কাজ করবে।
আগামী সপ্তাহে শ্রমবাজার গবেষণা ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে বলে শুক্রবার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বিএমইটি’র মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এ ইউনিট বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে, তা সমাধানের উপায় নিয়ে কাজ করবে।
এ ইউনিট মূলত বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, ইন্টারনেট, প্রবাসী বাঙালিসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্য নিয়ে কাজ করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশেও যাবেন এর সদস্যরা। ’
খোরশেদ আলম বলেন, ‘সম্ভাব্য নতুন শ্রমবাজার হিসেবে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলোকে টার্গেট করেছি। ’
এদিকে শ্রমবাজার গবেষণা ইউনিটের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ মিশন এরই মধ্যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশও ঘুরে এসেছে।
বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, ‘আফ্রিকা মহাদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বায়রা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানির পুরনো দেশগুলোতে এরই মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। তাই, নতুন বাজার অনুসন্ধান জরুরি। দূতাবাসগুলোকে সম্পৃক্ত করে নব গঠিত ইউনিটটি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ‘তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ ইউনিট ১০টি দেশে জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার পর যদি ২টি দেশেও বাজার উন্মুক্ত হয়, তাতেও এ উদ্যোগ সফল হবে বলে আমি মনে করি। ’
বিএমইটি সূত্র জানায়, বিশ্ব শ্রমবাজারের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, লিবিয়াসহ যে সব শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোও পুনরুদ্ধার করা জরুরি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’র (আইওএম) বাংলাদেশ অফিস শ্রমবাজার গবেষণা ইউনিট প্রতিষ্ঠায় বিএমইটিকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে, একজন আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞ বিএমইটি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি রপ্তানির সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি’র (বায়রা) সদস্যদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আইওএম-এর ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা আসিফ মুনীর।
তিনি বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হলো মার্কেটিং এবং প্রচারণা। জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের বিষয়টি তুলে ধরা এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ ইউনিট এ ২টি ক্ষেত্রে কাজ করবে। বিশ্বের জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই এসব বিষয়ে কাজ হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১০