ঢাকা: ময়মনসিংহগামী ৩৭ আপ ও চট্টগ্রামগামী ৩৮ ডাউন ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস; যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ের নিচে চাপা পড়ে থাকে এ ট্রেন দুটোর সত্যিকারের চেহারা!
অবাক হলেও সত্যি চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহের দীর্ঘ রেলরুটে মাত্র দুটো ট্রেন দিয়েই যাত্রী চাহিদা মেটানোর হাস্যকর চেষ্টা চলছে গত প্রায় দেড়যুগ যাবত।
কখনো তিনটি, চারটি বা কোনো কোনোদিন আড়াইটি (দুইটি যাত্রীবাহী বগি ও একটি মালামাল জয়েন্ট বগি) যাত্রীবাহী বগি নিয়ে যাতায়াত করে এ দুটো ট্রেন।
চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রেলরুটে যাত্রী সংখ্যা দেশের অন্যান্য অনেক রেলরুটের তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবত চরম অবহেলিত এই রেলরুটটি।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের হাজারও শ্রমজীবী মানুষ প্রতিদিন জীবিকার সন্ধানে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লাসহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে যাতায়াত করে আসছে। এদের মধ্যে কৃষি ও নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি।
অসহনীয় ভিড়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণাকে মেনে নিয়েও তাদের সহায় শুধু এ দুটো ট্রেন। কারণ ট্রেনে যাতায়াত খরচ অন্যান্য পরিবহনের চাইতে কম।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ থেকে আসা চট্টগ্রামে বসবাসকারী নির্মাণ শ্রমিক তৈয়ব উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার গরীবের দুঃখ বোঝে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে টাকা পয়সাওয়ালা লোকেরা যাওয়া আসা বেশি বিধায় এ রুটে উন্নত ট্রেনের ছড়াছড়ি। সিলেট রুটেও তাই। আর আমাদের এই ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে তুলনামূলক নিম্ন আয়ের যাত্রীদের জন্য শুধু একটা ট্রেন। সে ট্রেনের আবার তিনটি বগিই ভরসা। ”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) তাফাজ্জাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “যাত্রী চাহিদা ও বর্তমান বাস্তবতায় চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে একটি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনের প্রয়োজন অস্বীকার করার উপায় নেই। কয়েক বছর আগ পর্যন্ত এ রুটে বাহাদুরাবাদ ও নাসিরাবাদ নামে দুটি মেইল ট্রেন চলাচল করতো। কিন্তু রেলওয়ের চলমান ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে এ দুটি ট্রেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ”
তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান ইঞ্জিন, বগি ও লোকবল সংকট উত্তরণের আগে এ রুটে নতুন কোনো ট্রেন চালু করার সম্ভাবনা নেই বলে জানান।
একই বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিসিও (পূর্বাঞ্চল) রোকন জামান বাংলানিউজকে বলেন, “দীর্ঘদিনের যাত্রী চাহিদা ও দেশব্যাপী রেল যোগাযোগকে বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা গেলে তা সত্যিই খুব চমৎকার কাজ হবে। ”
এ রুটের বিভিন্ন স্টেশনের কয়েকজন টিকেট কালেক্টর জানান, এসব নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষগুলোর মধ্যে টিকেট কেটে যাতায়াত করার প্রবণতা অন্যান্য রেলরুটের তুলনায় অনেক বেশি।
জানা যায়, আশির দশকের শেষের দিকে এই রুটে প্রাচী-প্রতীচি নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করতো। ট্রেনটি ভৈরব জংশন দিয়ে কিশোরগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে কিছুদিন চলাচল করে। পরবর্তীতে আখাউড়া জংশন হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের একটি ট্রেনের সঙ্গে যৌথ চলাচলে দুটো ট্রেনের টাইমিং প্রবলেম ও তৎকালীন যাত্রী অপর্যাপ্ততা হেতু ট্রেনটি তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু তৎকালীন বাস্তবতা আর এখনকার বাস্তবতা পুরোপুরিই ভিন্ন। চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন এখন সময়ের দাবি— এমনই মনে করছেন সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে রেলওয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তরা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান বগি ও ইঞ্জন সংকটের কারণে এ রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন যদি এখনই দেওয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে বর্তমানে চলাচলকারী দুটো ট্রেনের বগি বাড়িয়ে সেটিকে ১০ থেকে ১২ বগির কমিউটার রেকে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন ভুক্তভোগী যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৩
আরআই