রাজশাহী: রাজশাহীতে নিম্নমানের টমেটোবীজের কারণে কৃষকরা সর্বস্বা:ন্ত হওয়ার পর এবার আলু চাষেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের বীজের কারণে গাছ না গজিয়ে মাটির নীচেই পচে যাচ্ছে আলুবীজ।
রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা ও তানোর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ জমিতে বীজ রোপণের পর আলুগাছ গজায়নি। তাই বীজ নিয়ে কৃষকের শংকা কাটছেই না।
আলুচাষীদের মতো রাজশাহীর বহু টমেটোচাষী এবারে সর্ব:স্বান্ত হয়েছেন বীজের কারণে। এ নিয়ে গোদাগাড়ীতে কৃষকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর জের কাটতে না কাটতেই আলোচনায় উঠে এসেছে আলু বীজ।
রাজশাহীর মাঠজুড়ে এখন আলু নিয়ে শোরগোল চলছে। আলু চাষে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। এ জন্য কৃষকরা দায়ী করছেন নিম্নমানের বীজকেই।
আলু চাষিদের অভিযোগ, নিম্ন মানের আলু বীজ রোপণ করে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আলু গাছ না গজানো েেত আবারো নতুন করে আলু রোপণ করতে হচ্ছে। এতে চাষের শুরুতেই চাষিদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ গুনতে হচ্ছে। আবার আলু উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় অনেক চাষী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী জেলায় এবার ৩৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের ল্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে এর চেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমে কাক্সিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক আগেই বিভিন্ন মাঠের নীচু জমিগুলো শুকিয়ে যায়। ফলে ছোট-বড় সব ধরনের কৃষক স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় আলু চাষে ঝোঁকেন। কিন্তু এবছর শুরুতেই তারা বিপাকে পড়েছেন। জমিতে বীজ লাগালেও গাছ গজায়নি।
পবার নওহাটার পুঠিয়াপাড়া গ্রামের হাবলু সরকার লিজ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। যার মধ্যে ৪ বিঘা জমিতে আলু গাছ গজায়নি। এতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
হাবলু সরকারের মতো মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের আব্দুস সালামের ৫ বিঘা জমিতে আলুগাছ হয়নি। তিনি স্থানীয় এক হিমাগার থেকে আলু বীজ নিয়েছিলেন। এদের মতো একই উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের মামুন, বারিকসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের ব্যাপক জমিতে রোপণ করা আলুবীজ মাটির নিচেই পচে যাচ্ছে। এর আগে রাজশাহীর টমেটোচাষীরা সিনজেন্টার টমেটোবীজ নিয়ে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েন।
এ ব্যাপারে অনেক কৃষক হিমাগার কর্তৃপকেও দোষারোপ করেছেন।
জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি এলাকার আলু চাষি আক্কাস আলী জানান, আলু চাষের পর তার বেশিরভাগ বীজ মাটির নিচেই পচে গেছে। কোল্ড স্টোরেজগুলোতে বীজ সংরণে ঠিকমত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করার করণেও বীজের গুণ নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে--এমন আশঙ্কার কথা জানালেন তিনি।
আক্কাস আলী জানান, রাজশাহী জেলায় মূলত আলুচাষীরা বেঙ্গল, যমুনা, রাজ, রায়হান, আমান, আমান অ্যাগ্রো, সরকার, রহমান, হিমালয়, পদ্মা এবং উত্তরাসহ বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজ থেকে বীজ নিয়ে আলু চাষ করেন।
বিএডিসি’র সরবরাহে আলু বীজ চাহিদার ৩ শতাংশও পূরণ সম্ভব হয় না। আর এ কারণে কোল্ডস্টোর থেকে ঋণে বীজ পাওয়ার কারণে চাষীরা বেশীরভাগ জমিতে কোল্ডস্টোরের বীজ রোপন করেছেন।
তবে কোল্ড স্টোরের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মেনে নিচ্ছে না। তার এ জন্য অসময়ে বৃষ্টিকে দায়ী করছেন।
কোল্ডস্টোরের মহা-ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, শুধু বীজের জন্য নয় এবারে আলুতে সেচ দেওয়ার পর হঠাৎ বৃষ্টির কারণে মাটিতে আলু বীজ পচে যাচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আলু বিভিন্ন কারণে পচতে পারে । তিনি বলেন, এবারে আলুর জমিতে সেচ দেওয়ার পর বৃষ্টি হওয়ার জন্য বেশি তি হয়েছে। যদি কাটিং থেকে আলু উৎপাদন করা হয়, তবে সেচের জন্য ফসল নষ্ট হবে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক অসীম কুমার বলেন, নিম্নমানের বীজের কারণে এবার কারো কারো জমিতে ঠিকমত গাছ গজায়নি।
তিনি বলেন, বীজ লাগানোর পর চাষিদের কেউ কেউ জমিতে সেচ দিয়েছেন। এতে করে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গিয়ে জমি স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ার কারণেও বীজে পচন ধরতে পারে। এজন্য নতুন করে ভালো বীজ-আলু রোপন করা ছাড়া কৃষকদের কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশ সময় ১১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১০