ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পুঁজিবাজার: ৮ বছরে ২৪৮ মামলা, নিষ্পত্তি শূন্যের কোটায়

এসএম গোলাম সামদানী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১০

ঢাকা: বছরে বছরে আদালতগুলোতে বাড়ছে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা। অথচ গত আট বছরে নিষ্পত্তি হওয়ার মামলার সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায়।



পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আদালতের দীর্ঘসূত্রতা এবং মামলা নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদিচ্ছার অভাবই এ মামলাজটের জটের অন্যতম কারণ।

আর বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মামলার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন  অথচ লাভবান হচ্ছে খোদ মামলা খাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নথি থেকে জানা যায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) করা এবং সংস্থাটির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হওয়া ২৪৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে ।

এর মধ্যে ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০০৮-০৯ অর্থ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ১৩৯টি মামলা দায়ের করে এসইসি। অন্যদিকে, একই সময়ে সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা হয় ৯৭টি।

২০০৩-০৪ অর্থবছরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১০০টি। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৬ টিতে। পরের অর্থবছরে ১৩৮, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১৫৬, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৮৬ এবং সর্বশেষ ২০০৮-০৯ সালে সংখ্যা পৌঁছেছে ২৪৮-এ।

এসব মামলার মধ্যে আপিল বিভাগে ৮টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৯৭টি, মহানগর দায়রা জজ আদালতে ঢাকা ৬টি, ঢাকা মহানগর ১ম সহকারী দায়রা জজ আদালতে ১টি, ঢাকা ৪র্থ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ১টি, ঢাকা ৫ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ৮টি, ৪র্থ সহকারী জজ আদালত ঢাকা ১টি, ঢাকা ৮ম সহাকারী জজ আদালতে ১টি, ঢাকা ৯ম সহকারী জজ (সাভার) আদালতে ১টি, ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮টি এবং ঢাকা জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতে ১১৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ১৫টি মামলাও আজ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমানে এসব মামলার ৭টি আপিল বিভাগে, ২ টি হাইকোর্ট বিভাগে এবং বাকি গুলো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।

শাহিন হালিম একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, “মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অভিযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ”

বিনিয়োগকারী মো. আসাদুজ্জামান অভিযোগ করেন, “বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে না হয় সেজন্য অনেক সময় কোম্পানির পরিচালকরা ইচ্ছা করেই এক জন আরেক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এর সঙ্গে ডিএসই এবং এসইসি’র এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ আনোয়ার হোসেন নামে একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর।  

তিনি দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন। তবে তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছিলেন তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।  

এদিকে, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এসব মামলা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তির জন্য এসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দীর্ঘদিন ধরে আদালতে আলাদা বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

গত বছরের ১৯ জুলাই  আইনমন্ত্রী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা দেখা করে বেঞ্চ গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। সেসময় মন্ত্রী আলাদা বেঞ্চ গঠনের আশ্বাস দেন। কিন্তু এক বছরেও সে আশ্বাস আলোর মুখ দেখেনি।

মামলাজট প্রসঙ্গে এসইসি’র সদস্য (আইন বিভাগ) মো. আনিসুজ্জামান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “অনেক মামলায় আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় নিষ্পত্তি করতে দেরি হচ্ছে। ”

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আদালতে আলাদা বেঞ্চ গঠন করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। কিন্তু এখনো কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ”
 
ডিএসইর সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান বলেন, “পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এসব মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই সরকারের উচিত এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া। ”

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১০
জিএস/কেএল/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।