ঢাকা: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, অন্যায্যতার একটি রূপ ও পরিচয় হচ্ছে দরিদ্রতা। দারিদ্র্য কেবল কিছু লোকের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, সামাজিকভাবেও এটি একটি অন্যায়।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যকে কীভাবে বদলানো যায়, পাল্টানো যায় সে বিষয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের লেখা একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রেহমান সোবহান রচিত বইটির নাম ‘দারিদ্র্যের অন্যায্যতাকে মোকাবেলা: দক্ষিণ এশিয়ার সমন্বিত উন্নয়নের এজেন্ডা’ (চ্যালেঞ্জিং দ্য ইনজাস্টিস অব পোভার্টি: এজেন্ডাস ফর ইনকুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া)।
অমর্ত্য সেন বলেন, মাকের্টের যে অর্থনৈতিক প্রয়োজন আছে এটা একটি সহজ কথা। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটাকে একটি বড় উপলব্ধি মনে করলে তাতে আমাদের চেতনা শক্তির অভাবেরই পরিচয়। কিন্তু লোকে দু’দিকে ভুল করতে পারে। এক হচ্ছে মনে করতে পারেন যে মার্কেটের কোনও প্রয়োজন সত্যিই নেই। এটা না হয়, এ রকম ভ্রান্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার অনেক কারণ আছে। অন্যদিকে এ রকম ভুলও হতে পারে যে মার্কেটের উপর সব কিছু ছেড়ে দিলে আর চিন্তার কিছু থাকবে না। সেটাও একটা ভুল চিন্তা।
তিনি বলেন, মার্কেটটা হচ্ছে কেদো জিনিস। সুযোগ সুবিধা করে দেয়। এটা মানতে হবে। এই সুযোগ সুবিধা সবাইকে পেতে হলে বহু জিনিসের প্রয়োজন। যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, লোকেদের কেনার ক্ষমতা, মার্কেটে ঢুকতে পারার সুযোগ থাকাÑ এগুলোর সব কটাতেই রাষ্ট্রের কাজ রয়েছে এবং এনজিওর কাজ রয়েছে। যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে তো তারা কাজ করতে পারবে না।
রাজনৈতিক অনেক সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি রাজনৈতিক কমিটমেন্টও থাকতে হবে। সব দিকেই দেখতে হবে। অতএব এই মার্কেটকে সবচেয়ে বড় সত্য বলে মনে করা এবং অন্য সব কিছুকে উড়িয়ে দেওয়া হলে ভুল হবে।
দিন বদল কথাটা এখানে আলোচনায় উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বলি এটা চিন্তার জিনিস, ভালো জিনিস। তবে কোন প্রেক্ষাপটে দিন বদল বলা হচ্ছেÑ সে বিষয়ে ভাবতে হবে। রেহমান সোবহানের বইটা সেই দিন বদলেরই বই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, সোবহান তার বইতে কৃষিখাতে সংস্কারের কথা বলেছেন। এটা আমাদের এখানে সম্ভব নয়। বরং ভূমি সংস্কার করা সম্ভব। এটা নিয়ে সরকার কাজ করছে। একই সঙ্গে তৃণমুল পর্যায়ে বিনিয়োগ হতে হবে।
তিনি বলেন, দরিদ্রতা কমাতে এ সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বলা যায়, দরিদ্রতা আগের চেয়ে কমেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দরিদ্রতা কমাতে রেহমান সোবহানের প্রস্তাব আমি ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত করা যায় কি-না তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, এনজিও নিয়ে সমালোচনা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে যা ঘটানো হয়েছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, গরীবদের শেয়ার মার্কেটে আনা যায় কি-না তাও ভাবতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদেরও উচিত দরিদ্রতাকে দূর করতে কাজ করে যাওয়া।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদুজ্জামান মাহমুদ বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলন অনেক দরিদ্রকে ধনী করেছে। দরিদ্রতা নির্মূলে এটা একটা মডেল।
তিনি বলেন, দরিদ্রতা নির্মূল করতে হলে মানসম্মত শিক্ষা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, দরিদ্রতা নির্মূলে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণ দেওয়া, কৃষকদের বীমার আওতায় আনা, কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধিতে দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি।
এ বিষয়গুলো চলতে থাকলে একটা সময় দরিদ্রতা আর থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেন, দরিদ্রতার ক্ষেত্রে কাঠামোগত অন্যায্যতা, দারিদ্র্য বিমোচনে বিরাজমান পন্থা, কাঠামোগত পরিবর্তন উন্নয়ন, কাঠামোগত পরিবর্তন উন্নয়ন নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগসমুহ এবং কাঠামোগত রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে কাজই হচ্ছে আমার বইয়ের মূল বিষয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ড. বিনায়ক সেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির ট্রাস্টি এম সাইদুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১১