ঢাকা: মূল্যস্ফীতি, মালিকদের সক্ষমতা এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে দেখাতে হবে ইতিবাচক মনোভাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) আয়োজিত গার্মেন্টস শিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকরা এই তাগিদ দেন।
বক্তারা বলেন, অর্থনীতি সচল রাখতে গার্মেন্টস শিল্পকে যে কোনো মূল্যে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এ সঙ্কট মোকাবেলায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্পের অভ্যন্তরে প্রয়োজনে বিজিএমইএ’র নিজস্ব অর্থায়নে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গড়াসহ এ শিল্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গঠনে বিজিএমইএ’কে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সঙ্কট নিরসনে সরকার, মালিক ও শ্রমিক সমন্বয়ে স্থায়ী প্লাটফর্ম তৈরির আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তির বিকল্প নেই। সরকার পরিচালিত ৫৬টি ভোকেশনাল ইনিস্টিটিউটকে বিজিএমইএয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বক্তারা গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার ক্ষেত্রে এনজিওদের জড়িত থাকার অভিযোগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ফায়দা লুটতে শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে থাকেন বলেও কোনো কোনো বক্তা অভিমত ব্যক্ত করেন।
দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘পোশাক শিল্পের সাফল্যের সঙ্গে আমাদের ভাগ্য জড়িত। ’ এ ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনীরুজ্জামান শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়ে মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে দর কষাকষি করে ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরীণ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।
সাংবাদিক বেবি মওদুদ বলেন, ‘কারখানার ছাদে কাক ও শ্রমিককে একসঙ্গে খেতে দেখেছি। এখনও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শ্রমিকদের জন্য যে রেশনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আমার পরিচিতদের মধ্যে কাউকে এ রেশন পেতে দেখিনি। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে। ভেতরের অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে সুযোগসন্ধানীরা যাতে ফায়দা লুটতে না পারে। শ্রমিকদের দাবির প্রতি আরও যতœবান হওয়ার আহবান জানান তিনি।
বিজিএইএ’র সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের যথার্থ বেতন দিতে চাই। তবে আমাদের সক্ষমতার বিষয়টিও দেখতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বমন্দা, ডলারের মান বেড়ে যাওয়া, ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের পোশাকের দরপতনের কারণে বিগত অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি ০.৫২ ভাগ কমেছে। ’ এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের ন্যূনতম প্রয়োজন অনুযায়ী পারিশ্রমিক নির্ধারণের দাবি জানান বিজিএইএ’র সভাপতি। তবে মন্দা কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের বেতন আবারও বাড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তাফা কামাল মজুমদার, প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক ইকবাল সোবাহান চৌধুরী, দৈনিক ডেসটিনির নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মদ আল ফয়সাল, ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সদস্য টিপু মুন্সি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময় ১৯০০, জুলাই ১৪, ২০১০