ঢাকা: তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স প্রত্যাহার করা না হলে দক্ষিণ সাঙ্গুর ম্যাগনামাসহ গ্যাস উত্তোলনে সকল বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে কের্য়ান এনার্জি। এদিকে, বিষয়টিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা।
কেয়ার্নের করপোরেট ট্র্যাক্স বিষয়ক ফাইলটি সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উর্ব্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানিয়েছেন।
এদিকে, করপোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ না করা এবং ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ার কারণে গত ১১ জুলাই কেয়ার্নের সঙ্গে নতুন উৎপাদন বন্টন চুক্তি (পিএসসি) করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর শুক্রবার এ বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’কে বলেন, ‘এখন গ্যাসের সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় আমরা চাইছি এর দ্রুত সমাধান করতে। ’
কেয়ার্ন সাঙ্গুর দক্ষিণে ১১ নং কুপে খনন করতে আগ্রহী বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ’
তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির বিষয়টি আগের পিএসসিতেই উল্লেখ আছে বলে তিনি জানান।
তবে এ বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপানোর চেষ্টা চলে আসছে।
এ মাসের গোড়ার দিকে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ট্যাক্সের বিষয়টি নির্ধারণ করবে মন্ত্রণালয়। ’
অন্যদিকে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি পেট্রোবাংলা দেখছে। তারাই ভাল বলতে পারবে। ’
টানাহেঁচড়ার এ পর্যায়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
গত ১১ জুলাই কেয়ার্ন এনার্জি সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেডের পক্ষ থেকে পেট্রোবাংলাকে পাঠনো এক চিঠিতে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির উপর ট্যাক্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে দক্ষিণ সাঙ্গু, ম্যাগনামাসহ কোন ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ করা হবে না বলে জানানো হয়।
সাঙ্গুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিল ডোলান পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মোহাম্মদ ইমাদউদ্দিনের বরাবর এ চিঠি পাঠান।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয, স্বল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডকে সক্রিয় রাখতে দুটি কুপ খননে যে খরচ পড়বে তাতে এ থেকে মুনাফা অর্জনই অসম্ভব হবে।
একই সঙ্গে ম্যাগনামাতেও গ্যাস অনুসন্ধানে দুটি কুপ খনন কাজও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘এই অবস্থায় অতিরিক্ত কর আরোপ এ খাতে বিনিয়োগকেই অনুৎসাহিত করবে। ’
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উর্ব্ধতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কেয়ার্ন এনার্জি ১০ ও ১৬ নং ব্লক থেকে গ্যাস উঠিয়ে তৃতীয় পরে কাছে বিক্রি করার অনুমতি চেয়েছিল ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসে। এসময় কেয়ার্নের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের তৃতীয় পরে কাছে গ্যাস বিক্রি অথবা গ্যাসের দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়া না হলে তারা কোন কাজ করবে না। এর পরিপ্রেেিত একই মাসে পেট্রোবাংলা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে কেয়ার্ন এনার্জিকে ১০ নং ব্লকের মগনামা ও হাতিয়ায় গ্যাস পেলে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করে।
নোয়াখালী, লীপুর ও ভোলার ৩ হাজার ৮৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ১০ নং ব্লক।
সর্বশেষ গত মার্চ মাসে ১০ নং ব্লকের পাশে সুন্দলপুরকে এই ব্লকের যোগ করা এবং এর আগে ১৬ নং ব্লকে অবস্থিত দক্ষিণ সাঙ্গুর গ্যাস তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। নতুন করে তাদের এই দাবি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
পেট্রোবাংলার একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না কররার শর্তে জানান, দক্ষিণ সাঙ্গু থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। এই গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
পিএসসি’র ধারা ১০ এ বলা হয়েছে, কোম্পানি তৃতীয় পরে কাছে গ্যাস বিক্রি করতে পারে যদি পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনতে রাজি না হয়। অন্যদিকে ধারা ১৬ তে বলা হয়েছে, হয় পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনবে অথবা আন্তর্জাতিক কোম্পানি তৃতীয় পরে কাছে গ্যাস বিক্রি করবে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৪০৪, জুলাই ১৬, ২০১০।