ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১
সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার

ঢাকা: সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সরকারি অংশের শেয়ার বাজারে ছাড়ার (অফলোড) সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও সংস্থার শেয়ার অফলোড করা সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।



নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে না পারলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ করতে হবে বলেও অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ২১টি কোম্পানি ও সংস্থার শেয়ার বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আছে; প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের হাতে থাকা আরও শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হবে।

যদিও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে আলোচনার জন্য বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার এরই মধ্যে বাজারে এসেছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। অন্য কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারছাড়ার উপযোগী এখনও না হওয়ায় সময় দেওয়া হয়। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নতুন করে সম্পদমূল্য নির্ধারণ (অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন) করার জন্যও সময় দেওয়া হয়।

গত কয়েক বছর ধরেই অবশ্য এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার কথা জানানো হচ্ছে। তবে নানা কারণে শেয়ার বাজারে আসছিল না। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবরই ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপে রেখে আসছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি তারই ধারাবাহিকতারই অংশ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ মাসেই আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে আসবে মেঘনা পেট্্েরালিয়াম ও যমুনা অয়েলের সরকারের হাতে থাকা শেয়ার।

এরপর ৩১ মার্চ ছাড়তে হবে তিতাস গ্যাস, ডেসকো, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও এলপিজিএল’র শেয়ার।

৩০ এপ্রিলের মধ্যে টেলিফোন শিল্প সংস্থা ও সাবমেরিন ক্যাবলস লিমিটেডডের শেয়ার।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার বাজারে দিতে হবে মে মাসের মধ্যে।

৩০ জুন প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর ১০ শতাংশ, বাংলাদেশ কেবল্স শিল্প লিমিটেড, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩১ জুলাই বাজারে আসবে বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ও বিটিসিএলের শেয়ার বাজারে আসবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের হোটেল শেরাটনের ২০ শতাংশ শেয়ার ৩০ মার্চ ও হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিটিটেডের সোনারগাঁও হোটেলের ৩০ শতাংশ শেয়ার ৩০ জুনের মধ্যে বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান সম্পদমূল্য চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ (অ্যাসেট ইভাল্যুয়েশন) শেষ করা হবে।

কর্ণফুলী পেপার মিলসের শেয়ার বাজারে আসবে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।

সিলেট গ্যাসফিল্ড ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের শেয়ার ছাড়া হবে না, এদের বন্ড আসবে বাজারে। তবে এর তারিখ নির্ধারণ হয়নি।    

সরকারি শেয়ার অফলোড করার এ সময়সীমার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা এ সময়সীমা মেনে বাজারে শেয়ার ছাড়তে ব্যর্থ হবে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদ ছেড়ে দিতে হবে। এ কথাতো আমি আগেই বলেছি। ’  

সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও সংস্থার শেয়ার বাজারে ছাড়া সংক্রান্ত ওই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কোম্পানির অ্যাসেট ভ্যালুয়েশনে সমস্যা থাকায় সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে এসইসি প্রধানের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী ১ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন সম্পন্ন করবে। ’

অ্যাসেট ভ্যালুয়েশনের অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিগুলো হল জিটিসিএল, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস, জালালাবাদ গ্যাস ও পিজিসিবি। এরপর এসব কোম্পানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটিডের শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে না। কারণ এই কোম্পানির ৭৯ শতাংশ শেয়ার বিভিন্ন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কাছে দেওয়া আছে। ’

এছাড়া সিলেট গ্যাসফিল্ড ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের শেয়ার ছাড়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলোর বন্ড বাজারে আসবে। এরআগে সেখানে কত পরিমাণ গ্যাস আছে তার হিসাব করা হবে। ’  

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতুর শেয়ার এখনই ছাড়া হচ্ছে না। পরে আমরা  বিবেচনা করে দেখবো কিভাবে এগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়া যায়। ’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান জিইএম কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে না বলে অর্থমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানি। ’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন সুগার মিলগুলোর শেয়ার এখনই বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত আপাতত বাদ দেওয়ার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।    

বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ থাকা ন্যাশনাল টিউবস, রূপালী ব্যাংক, পদ্মা অয়েলের শেয়ার এরই মধ্যে বাজারে এসেছে বলেও জানানো হয়।

তিনঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে এলে বাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রীসহ বৈঠকে অংশ নেওয়া মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময় ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।