ঢাকা: তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন, দুর্যোগকালীন বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও শিশুর পুষ্টি, বুদ্ধিমত্তা বিকাশসহ তিন প্রকল্পে প্রায় এক দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।
বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকমণ্ডলী চূড়ান্তভাবে এ তিনটি প্রকল্পের আর্থিক প্রস্তাবনার অনুমোদন দেয়।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিশুর পুষ্টি বুদ্ধিমত্তা বিকাশ প্রকল্প:
হতদরিদ্র মায়েদের সেবায় (৩০০) মিলিয়ন বা প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৩০০ মিলিয়ন ডলার) ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়নাধীন ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেবে সংস্থাটি।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য- নির্বাচিত ৭ জেলার ৪২টি উপজেলায় সমাজের দরিদ্রতম নারীদের আয় লাভে সহায়তা করা; এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মায়েদের সুনির্দিষ্ট সেবা গ্রহণের জন্য নগদ অর্থ দেওয়া; সামাজিক নিরাপত্তাজাল বা সেফটি নেটের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কমন ইমপ্লিমেন্টশন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা; উপকারভোগী নারীদের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নগদ সহায়তা দেওয়া; গর্ভবতী মা ও শিশুদের সেবা দেওয়াও প্রকল্পের অন্যতম কাজ; গর্ভবতী মায়েদের প্রসবপূর্ব অ্যান্টিনেটাল কেয়ার ভিজিট সেবা দেওয়া;
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ- ইআরডি সূত্র জানায়, শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের মাসিক ভিত্তিক গ্রোথ মনিটারিং অ্যান্ড প্রমোশন (জিএমপি) সেবা দেওয়া হবে। ২-৫ মাস বয়সী শিশুদের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতেও সেবা দেওয়া হবে। প্রতি মাসে মায়েদের ‘চাইল্ড নিউট্রিশন অ্যান্ড কগনিটিভ ডেভলপমেন্ট (সিএনসিডি) সেশনে অংশগ্রহণ করানো হবে। প্রকল্পের আওতায়, ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পোস্টঅফিসের সমন্বয় করাও অন্যতম কাজ।
বাংলাদেশ প্রোভার্টি ডাটাবেজ (বিপিডি) থেকে উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়ন ও তদারকির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সক্ষমতাও। ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পোস্টঅফিসমূহের পোস্টাল ক্যাশ কার্ড (পিসিসি) ভাতা পরিশোধের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন প্রকল্প:
তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি) ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩,২০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।
সূত্র জানায়, দেশে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটির আওতায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি।
এ প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ৬৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় বাড়ছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। নানা উদ্দেশ্যে এই অর্থ দিচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগীরা (স্টেক হোল্ডাররা)।
এর অন্যতম উদ্দেশ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গমনোপযোগী সব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে সামাজিক বৈষম্য হ্রাসকরণ; বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি ও পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকরণ; শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন; প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীদের শিশুবান্ধব শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা।
বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), অস্ট্রেলিয়ান এইড, কানাডিয়ান (সিডা), ইউনাইটেড কিংডমস ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সুইডিশ (সিডা) ও ইউনিসেফ কর্মসূচির অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর নানা গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ২০১১ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় বলে জানা গেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার ভূমিকা এর মধ্যে অন্যতম। এ সব বিষয় বিবেচনা করে ১০ বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য হারে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি করা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। নারী শিক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ভর্তিকৃত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সমতা আনয়ন সম্ভব হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে মহাপরিচালক মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ বাকি আছে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ছে। নতুন করে কর্মসূচির আওতায় অতিরিক্ত ৬৬৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দুযোর্গকালীন বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প:
এই প্রকল্পে ৩৭৫ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য প্রকল্পের আওতায় নয়টি উপকূলীয় জেলায় ৫৫২টি নতুন বহুমূখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
বর্তমান ৪৫০টির সংস্থার ও উন্নয়ন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে সহজে পৌঁছানোর জন্য সংযোগ সড়ক ও নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।
প্রকল্প তিনটি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট বলেন, এই প্রকল্পগুলো দরিদ্র জনগণের জন্য সুযোগ সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা, তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
তিনি জানান, প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে শিশুর পুষ্টিমানের উন্নয়নে দরিদ্র মায়েদের নগদ অর্থ দেওয়া হবে। শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যালয় ও অবকাঠামো সৃষ্টি করবে।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কার্যক্রমগুলো নিশ্চিত করবে যে, বাংলাদেশের দরিদ্রতম শিশুরাও যেন তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে।
বিশ্বব্যাংক সহযোগী আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মাধ্যমে সহজ শর্তে এই কর্মসূচিতে ঋণ দিচ্ছে। প্রাপ্ত সুদমুক্ত ঋণের মেয়াদ ৬ বছরের রেয়াতসহ ৩৮ বছরে বিশ্বব্যাংককে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪