ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘যা জানলাম, তাতে বহুত হুঁশ হইছে’

জাহিদুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
‘যা জানলাম, তাতে বহুত হুঁশ হইছে’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাভার: ‘এহন থাইক্যা সোনিয়ার বাপরে কমু, যেন তেন জায়গা থাইক্যা যাতে সিলিন্ডার গ্যাস না কিনে। আইজ যা জানলাম, তাতে আমার নিজের বহুত হুঁশ হইছে।

এই ট্রেনিংডা আগে পাইলে আরো ভালো হইতো। পাড়া-প্রতিবেশিগো নিজেই সচেতন করতে পারতাম’।

এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা রোধ ছাড়াও ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ‘নিরাপদ নিবাস’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এভাবেই বাংলানিউজের কাছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন সাভারের সিন্ধুরিয়া গ্রামের গৃহিণী শাহনাজ বেগম।

সাভারের হেমায়েতপুরে একটি রেস্তোঁরায় এলপি গ্যাস ব্যবহারের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি সাধারণ নিয়মাবলী ও সাবধানতার কৌশলসহ যাবতীয় বিষয় তুলে ধরা হয় ব্যবহারকারীদের কাছে।

‘এলপি গ্যাস ব্যবহারে প্রশিক্ষণ নিন, নিরাপদ থাকুন প্রতিদিন’- এ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন সাভারের বিভিন্ন স্থান থেকে বাছাই করা সেরা ৪৫ জন গৃহিণী।

গৃহিণীদের সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে এলপি গ্যাস ব্যবহার ও কেনার সাধারণ নিয়মাবলী তুলে ধরেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের বিক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মীর তরিকুল ইসলাম ফারুক রিজভী।

সাভারের বলিয়ারপুর থেকে এসেছিলেন গৃহবধূ সোহানা আক্তার। তার কোলে ছিলো দেড় বছরের কন্যা তোয়ামনি। গুরুগম্ভীর এই আলোচনা তো শিশুদের না! বার বার মায়ের কোল থেকে নেমে যেতে চাইছিলো শিশুটি। কিন্তু সোহানার তীক্ষ দৃষ্টি তখনো মঞ্চের দিকে। গভীর মনোযোগেই শুনছিলেন সবকিছু।
এক পর্যায়ে স্বামী আব্দুর রহিমকে ডেকে সন্তানটিকে তার কোলে সঁপে দিয়ে দৃষ্টি ফেরান মঞ্চে।

পরে সোহানা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ভাগ্য যে আমি এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের একজন। আসলে এখন দেখছি কতো ভুলভাবেই না এতোদিন এলপি গ্যাস ব্যবহার করেছি। ভাগ্যিস ট্রেনিংটা আজ নিলাম। নইলে যে কি হতো’!

ভাকুর্তা গ্রামের গৃহবধূ আমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ জানলাম, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস কর্তৃপক্ষ আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কতোটা যত্নবান’।

তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে বাড়িতে কোন গ্যাস আসলো, তা নিয়ে আগে তেমন মাথাব্যথা ছিলো না। আজ বুঝলাম, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস আসলেই অনন্য। এখন থেকে আমার একমাত্র পছন্দের এলপি গ্যাসই হবে বসুন্ধরা’।

প্রশিক্ষণ থেকে নিজের অভিজ্ঞতা লাভের পর পৌরসভার ডগরমোড়া এলাকার বাসিন্দা শামছুন্নাহার তুলি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ বুঝলাম, সিল্কে শাড়ি পরে কখনোই এলপি গ্যাসে রান্না করা উচিৎ না। রান্নার সময় সিলিন্ডারের আশেপাশে মোবাইল ফোনও যেন না থাকে। ইলেকট্রিক সুইচ অফ-অন করা না হয়। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা হলো’।

ভাকুর্তা থেকে আসা কলেজছাত্রী মাকসুদা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ‘এ প্রশিক্ষণ থেকে জানলাম, সিলিন্ডারের পুরত্বের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সূর্যের আলো থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখতে হবে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যাতে সিলিন্ডার না থাকে, সে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ’।

সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা সাহারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিলিন্ডারের হোস পাইপ বছর গড়িয়ে গেলেও আমি পরিবর্তন করিনি। আজ জানতে পারলাম, হোস পাইপ ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। সিলিন্ডার কাত না রেখে সমতল অবস্থানে রাখতে হবে। এ ছাড়াও স্বামীকে বলে দেবো, রিকশা কিংবা সাইকেলে যখন সিলিন্ডার বাড়িতে আনা হয়, তখন যাতে কাত করে না আনে’।

সাভার পৌর এলাকার জামসিং মহল্লার গৃহিণী জামেলা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে সিলিন্ডার লিক হলে কি করতে হবে তা জানতাম না। আজ জানলাম, সিলিন্ডারের কোথাও থেকে বুদবুদ বের হলে আশেপাশের বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। সাবান পানি দিয়ে তা দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে’।

অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ডিভিশনাল ম্যানেজার আহাম্মদ আলী রিপন, ব্রান্ড বিভাগের আরিফ সিদ্দিক, সাভারের পরিবেশক হাফেজ নূর মোহাম্মদ।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের বিক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মীর তরিকুল ইসলাম ফারুক রিজভী বাংলানিউজকে জানান, আমরা ভোক্তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় সব সময়ই সচেতন। বেশ কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে গ্যাস রিফিলিং করে বাজারজাত করছে। এর ফলে সিলিন্ডার লিকেজের ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। এর বিরুদ্ধে সচেতন ও জনমত গড়ে তুলতেই আমরা ‘নিরাপদ নিবাস’ নামের এ কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা সন্মানিত ভোক্তাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, তারা যাতে নিজেদের জীবন রক্ষায় সচেতন হন। আসল ও মানসম্মত এলপি গ্যাস কেনেন। সিলিন্ডারের রি-টেস্টিং ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

তিনি আরও জানান, আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা, গাজীপুর, বগুড়া, নাটোর, দিনাজপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোরে এ কর্মসূচি পালন করেছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই বার্তা ছড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

তিনি জানান, একমাত্র বসুন্ধরা এলপি গ্যাসই দিচ্ছে সুরক্ষার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা। ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছ দিতেই আমাদের এই প্রয়াস- যোগ করেন মীর তরিকুল ইসলাম ফারুক রিজভী।

পরে অংশগ্রহণকারীদের সন্মানে আয়োজন করা হয় আকর্ষণীয় র‌্যাফেল ড্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।