কক্সবাজার: বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণের মাধ্যমে দুই হাজার বছরের পুরনো সিল্ক রুটে যুক্ত হতে যাচ্ছে প্রতিবেশী চারটি দেশ। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের দ্বিতীয় বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব হবে ২৪৯০ কিলোমিটার এবং এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। অর্থের উৎস নিয়েও বৈঠকে আলোচনা চলছে।
বৈঠকের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এ ব্যাপারে আরও আলোচনা করে এর ওপর ভিত্তি করে ৪ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার দুই হাজার বছরের পুরনো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমার ও চীনের রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তখন। কিন্তু নানা কারণে এর অগ্রগতি হয়নি। পরে ১৯৯৯ সালে চীনের নেতৃত্বে আবারো সিল্ক রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে এ অঞ্চলের দেশগুলো। আর এটি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম।
চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য কক্সবাজার, টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব, মান্ডালায়ে হয়ে তা কুনমিং পর্যন্ত পৌঁছানোই হলো এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য। এর আলোকে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোরের জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ গঠন করে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন।
২০১৩ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর চীনের বেইজিংয়ে চার দেশের মধ্যকার প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী বৈঠক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বৈঠকের প্রথম দিন ৪ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ৯টি বিষয়ে তাদের বক্তব্য, অভিমত প্রকাশ করেন। এ ৯টি বিষয় হলো, জ্বালানি সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য সহজীকরণ, শুল্ক কমানো, নন-ট্যারিফ বাধা দূর, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৭ প্রতিনিধি, চীনের ১৫, ভারতের ৭ এবং মিয়ানমারের ৫ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রথম দিন সিল্ক রুটের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা। তৃতীয় বৈঠক আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদুল হক।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, বৈঠকের প্রস্তাব সমূহ প্রতিবেদন আকারে গ্রহণ করে এর ওপর রাজনৈতিক মতামত গ্রহণের প্রয়োজনও রয়েছে।
এ করিডোর বাংলাদেশের অনুন্নত এলাকায় উন্নয়ন বয়ে আনবে বলেও মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদুল হক।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এটা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক পরিবর্তনও হবে।
** হাজার বছরের পুরোনো সিল্ক রুটে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪