ঢাকা: অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ৪৩ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
গভর্নর জানান, রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণেই রিজার্ভের নতুন এ রেকর্ড হয়েছে। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ বছরে দেশে রিজার্ভ বেড়েছে ৩ গুণ। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিন শেষে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে রিজার্ভ।
বৃহস্পতিবার(১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্সে ট্রাস্ট ব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে গভর্নর এ তথ্য জানান।
‘১০ টাকার হিসাবধারী ক্ষুদ্র/প্রান্তিক/ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে কৃষি ঋণ বিতরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ট্রাস্ট ব্যাংকের এসএমই ও গ্রিন ব্যাংকিং বিভাগ।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমে ৬ শতাংশে চলে এসেছে। আগে দিনের ব্যবধানে টাকার মানে বড় ধরনের উঠা-নামা করতো। এখন এটি বন্ধ হয়েছে। টাকার মান স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানের মতো স্থিতিশীল থাকলে অর্থবছর (২০১৪-১৫) শেষে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক দেশ হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথম বারের মতো ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। আর চলতি বছরের ৫ নভেম্বর অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে রিজার্ভ ২২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
দশ টকার হিসাবধারী কৃষকদের ঋণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, আর্থিক সেবাবঞ্চিত তৃণমূলের জনগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবাভুক্তির আওতায় আনার লক্ষ্যে দেশের কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্যে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরই ধারাবাহিকতায় ১০টাকার হিসাবধারী ক্ষুদ্র/প্রান্তিক/ভূমিহীন কৃষকসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী এবং প্রান্তিক/খুদে ব্যবসায়ীদের আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব উৎস থেকে ২০০ কোটি টাকার একটি আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে।
১০ টাকার হিসাবগুলো সচল রাখার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অধিকতর গতিশীল করাও এ তহবিলের অন্যতম উদ্দেশ্য। ১০ টাকার হিসাবধারী শ্রমজীবী মানুষ সরাসরি ব্যাংক থেকে অথবা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমোদন প্রাপ্ত এমএফআই’র মাধ্যমে এ তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
গভর্নর জানান, এ পর্যন্ত ৩২টি ব্যাংক ১৩৯ কোটি টাকা ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরইমধ্যে ৩১টি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অংশগ্রহণমূলক চুক্তি সই হয়েছে। ১৫টি ব্যাংক এমএফআই‘র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা করছে। ট্রাস্ট ব্যাংক এ পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দুই কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে।
অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা ‘সজাগ’ এর পরিচালক আব্দুল মতিনের হাতে ট্রাস্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। আর তেতুলিয়ার কৃষক সমিতিকে দেওয়া হয় দেড় কোটি টাকার চেক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪