ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যয় ১৩৩৫ কোটি

ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে ১৫ উপজেলা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪
ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে ১৫ উপজেলা ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: দেশের ১৫ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে ‘ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্ক ডেভলপমেন্ট’ প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৩৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৫টি উপজেলার বিদ্যুতের গ্রিড বিপর্যয় নিরসনসহ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে।



এই প্রকল্পের ওপর  প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটির(পিইসি)সভার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড(পিজিসিবি)। এতে দেখা গেছে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৬২৫ কোটি ২০ লাখ, সরকারি অর্থায়ন ৩২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩৮৩ কোটি ৫১ লাখ।

প্রকল্পটি ঢাকার গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও বাগেরহাটে বাস্তবায়িত হবে। খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ, গল্লামারী, ভেড়ামারা, সাতক্ষীরায় বাস্তবায়িত হবে। রাজশাহী বিভাগের ঈশ্বরদী, ভাঙ্গুরা, রাজশাহী, বাঘাবাড়ী ও বগুড়া উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। রংপুর বিভাগের শুধু মিঠাপুকুর উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি।

পিজিসিবি’র নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্কের আওতায় দেশের ১৫টি উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৬-১৭ অর্থবছর নাগাদ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যাবে। ’

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ১৫টি উপজেলায় কিছু কিছু দূর্বল লাইন আছে সেগুলোকে মেরামত করার পাশাপাশি নতুন নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবো। এই অঞ্চলে উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি নতুন নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কিছু অঞ্চলে আপগ্রেডেশনের কাজও করা হবে। ’

প্রকল্পের আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত সরবরাহ হবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আলমগীর বলেন, কয়লাভিত্ত্বিক বিদ্যুত সরবরাহের জন্য আরো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সিস্টেম দরকার হয়। তবে সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হবো। কারণ কিছু সময় পর আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বো। ’  

প্রকল্পের উদ্দেশ্যঃ ঈশ্বরদী-রাজশাহীতে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, গল্লামারী-গোপালগঞ্জে ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বাঘাবাড়ি-ভাঙ্গুরা সিঙ্গেল সার্কিট ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।

ভাঙ্গুরা, সাতক্ষীরা ও মাদারীপুর এলাকায় নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। খুলনায় ভবিষ্যত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে।

বিদ্যুমান নাটোর-রাজশাহী ১৩২ কেভি লাইনের লোড হ্রাস করার পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদাও পূরণ করা হবে।

 পিজিসিবি সূত্র জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও গ্রীড বিপর্য়  এড়াতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বর্ধনশীল চাহিদা পূরণের জন্য নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার প্রয়োজন।

পিজিসিবি আরো মনে করে, এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক জ্বালানির ব্যাপক অভাব রয়েছে। যেহেতু গ্যাসের মজুদ দিন দিন কমেছে, তাই সরকার বিদ্যুতের উৎপাদনের জন্য গ্যাসের ব্যবহার কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘কয়লানীতি ‍গৃহীত হওয়ার পরে স্থানীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মার্ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মংলা এবং চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন আছে। ’

‘মংলার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান সমুদ্র বন্দরের কাছে যা খুলনা(দক্ষিণ) ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। প্রস্তাবিত মংলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের একাংশ পশ্চিমাঞ্চলের সিস্টেম নেটওয়ার্ক আওতাধীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলাসহ খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে সরবরাহ করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। ’

প্রকল্পটি হাতের নেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে পিজিসিবি আরো জানায়, যদিও খুলনাই হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলও ইদানীং অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। স্থানীয় বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে খুলনা অঞ্চলে অনেক তেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। কিছু কিছু বিদ্যু‍ৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে। ’

‘গল্লামারী-গোপালগঞ্জ ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, মংলা-বাগেরহাট ১৩২ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট লাইন, খুলনা(দক্ষিণ)-সাতক্ষীরা কেভি সঞ্চালন নেটওয়ার্ক লাইন আরও শক্তিশালী করা হবে।

অপরদিকে ভেড়ামারা-রাজবাড়ী ৩১২ কেভি লাইন রিকন্ডাক্টরিং বর্তমান দক্ষিণাঞ্চলের ১৩২ কেভি সঞ্চালন নেটওয়ার্কে আরো শক্তিশালী করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় পিজিসিবি।

প্রকল্পের অন্যতম কার্যক্রমঃ ঈশ্বরদী-রাজবাড়ী ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। ৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ গল্লামারী-গোপালগঞ্জ ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। বাঘাবাগি-ভাঙ্গুরা সিঙ্গেল সার্কিট ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইনের দৈর্ঘ প্রায় ৩২ কিলোমিটার। ভেড়ামারা-রাজবাড়ী ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন রিকন্ডাক্টারিংয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

প্রকল্পের আওতায় ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার ইন-আউট লাইন নির্মাণ করা হবে। ঈশ্বরদী-খুলনা, ঝিনাইদহ-যশোর, ভেড়ামারা-ফরিদপুর, রংপুর-পলাশবাড়ী ও ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গায় ইন-আউট লাইন নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় ইশ্বরদী, গল্পামারী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মংলা, বাগেরহাট ও বাঘাবাড়ী উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ করা হবে।

উপকেন্দ্র নির্মাণ ও আপগ্রেডেশন: ঝিনাইদহে ২৩০/১৩২ কেভি ২.২২৫/৩০০ এমভিএ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। রাজশাহীতেও ২৩০/১৩২ কেভি ২.২২৫/৩০০ এমভিএ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। রাজবাড়ী, মিঠাপুকুর, ভাঙ্গুড়া, বগুড়াতেও উপকেন্দ্র নির্মাণ ও আপগ্রেডেশনের কাজ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।