ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লোকসান নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪
লোকসান নিয়ে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঠাকুরগাঁও: গত ৩ মৌসুমের অবিক্রিত চিনি ও ১৩০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়েই শুক্রবার থেকে চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকল।

ডিলাররা দেশি চিনি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় গুদামেই নষ্ট হচ্ছে মিলের উৎপাদিত চিনি।

এতে মিলের লোকসানের বোঝা বাড়ার পাশাপাশি চাষিরাও আখ চাষ থেকে বিমুখ হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ মৌসুম ধরে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে মিলটিতে মজুদ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি চিনি। জেলার ২৩ জন চিনির ডিলার থাকলেও তারা দেশি চিনি বিক্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

ফলে ২০১২ ও ১৩ সালের উৎপাদিত ৭ মেট্রিক টনেরও বেশি চিনির গুণগত মান নষ্টের পথে। এতে মিলটিতে দিনদিন বাড়ছে লোকসানের ভার। ফলে একদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, সময়মতো আখের পাওনা না পেয়ে আখ চাষ থেকে সরে যাচ্ছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার সালন্দর গ্রামের আখ চাষি মজিদুর রহমান, শেখ মোহাম্মদ, জুলফিকার হোসেন জানান, আখ চাষ করে তারা লাভের মুখ দেখেন না। মিলে আখ সরবরাহ করে সময়মতো পান না আখের দাম।

তাদের মতোই সদর উপজেলার নাগুন গ্রামের চাঁদ মিয়া, কৃষ্ণপুর গ্রামের আবেদুর রহমান, সৈকত আলী এবারের আখ নিয়ে হতাশ। তাদের অভিযোগ আখ সরবরাহ ও টাকা পেতে তাদের হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় বিভিন্ন দপ্তরে।
 
ঠাকুরগাঁও চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে জানান, মিলের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পায়না। অনেক সময় তাদের পাওনা বেতন পেতে চিনি তুলে বাইরে কম দামে বিক্রি করতে হয়।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ডিলার শাহাজাহান খান জানান, দেশীয় চিনিকলের উৎপাদিত চিনি বাজারে চলছে না। তাই এ মিল থেকে চিনি উত্তোলন করা হচ্ছে না। বাজারে এখন সাদা আকৃতির চিনির চাহিদা বেশি।
 
ঠাকুরগাঁও চেম্বার সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, আমদানিকৃত চিনির গুণগত মানের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত চিনির  গুণগত মান একই রকম বজায় রাখতে হবে। এ জন্য উৎপাদিত চিনি রিফাইনিং ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োজন। এছাড়া উৎপাদিত চিনির মূল্য বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের উপ-ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, গত মৌসুমেই মিলটি লোকসান দিয়েছে সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা। গত মৌসুমে মিলটি ৯৫ দিন চালু থেকে ১ লাখ টনেরও বেশি আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে ৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন। কিন্তু আসন্ন মৌসুমে আখ সংকটের কারণে মিলটি ৫৭ দিন চালু থেকে ৮০ হাজার টন আখ মাড়াই করে উৎপাদন করবে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান, মিলজোন এলাকায় বেশ কিছু গুড় ব্যবসায়ী পাওয়ার ক্রাসারে গুড় তৈরি করে থাকে। তারা চড়া দামে আখ কিনে গুড় তৈরি করার ফলে অনেক চাষি গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে নগদ টাকায় আখ বিক্রি করছে। ফলে প্রতিবছর আখ সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য আখের দামও বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
 
এ বছর চিনিকল কর্তৃপক্ষ চাষিদের মধ্যে ৫১ কেন্দ্রে প্রায় ৭ কেটি ৫২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।

তিনি আরো জানান, দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা এ বছর চিনিকলে আখ বিক্রি করতে উৎসাহিত হবেন। এছাড়া আখ চাষিদের চিনিকলের আওতায় আখ বিক্রি করতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠক করে উৎসাহিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।