ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ছাকনি পদ্ধতিতে’ তেল অপসারণ সম্ভব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪
‘ছাকনি পদ্ধতিতে’ তেল অপসারণ সম্ভব

ঢাকা: সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল ‘ছাকনি পদ্ধতিতে’ অপরসারণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে ন্যানোপার্টিক্যাল প্রোটিনের প্রলেপ দেওয়া এক প্রকার কিচেন টাওয়েল দড়িতে বাঁধা থাকে।

দড়ি টানলে এই টাওয়েলই পানিকে ছেঁকে বের করে দেয়। আর তেল ড্রপের মতো হয়ে ভেসে থাকে। যা সহজেই অপসারণ করা যায়।
 
সারা বিশ্বে সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে গালফ অব মেক্সিকোতে ঘটে যাওয়া ‘বিপি ওয়েল স্পিল’ দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনা হয়েছিল ২০১০ সালে ২০ এপ্রিল। এতে প্রায় ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ছড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষে ছাঁকনি পদ্ধতি প্রয়োগ করে একই বছর ১৫ জুলাই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
 
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ বিপি ওয়েল স্পিল ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা সুন্দরবনের তেল অপসারণে অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করছে। একই সঙ্গে বুয়েট আশা করছে সরকারও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
 
পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম বদরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনায় আলাস্কাতে প্রথম কিচেন টাওয়েল ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ২২ বছর হয়ে গেলেও তারা সাফল্য পায়নি।

তবে ২০১০ সালে গালফ অফ মেক্সিকোতে বিপি ওয়েল দুর্ঘটনা যখন হলো তখন একজন অধ্যাপক এটাকে আরো উন্নয়ন করলো। ওই অধ্যাপক কিচেন টাওয়েলের ওপরে একটা ন্যানোপার্টিক্যাল প্রোটিন দিয়েছিল। যা দড়ির সঙ্গে বেধে চালুনের মতো টানলে পানিটা বেরিয়ে যায়। আর তেল আলাদা হয়ে ড্রপের মতো থেকে যায়, এবং ভেসে থাকে। এই পদ্ধতি তাদের সফলতা এনে দিয়েছিল। আমারা বিপি ওয়েল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি সরকারও যোগাযোগ করবে।
 
তিনি বলেন, এখনই সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ায় সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। তেল অপরসারণ করা না গেলে যে সব জীব কেবল তৈলাক্ত পরিবেশ বাঁচতে পারে, তারাই টিকে থাকবে।
 
এনভায়রনমেন্ট ওয়াচ: বুয়েট আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে সিনিয়র এ অধ্যাপক পদ্ধতিটি আমলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ‘ওয়েল স্পিল ইন দি ‍সুন্দরবনস: ইফেক্ট অ্যান্ড সলুসনস’ শীর্ষক বৈঠকটি মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বুয়েটের সিভিল বিল্ডিং মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়।
 
এতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল বলেন, তেল ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হবে। কারণ হেভি মেটালের কারণে এটা পানির সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে অপসারণ হবে না। প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছরও লেগে যেতে পারে এটি ঠিক হতে। এতে দিনে আর আগের সুন্দরবনকে ফিরে পাওয়া যাবে না। পাখি, প্রাণী থেকে শুরু মাছের প্রজনন কমে যাবে। অনেক প্রজাতী বিলুপ্তও হয়ে যাবে।

তবে এই ক্ষতি কমাতে ছড়িয়ে পড়া তেল ফ্লাস করে সমুদ্রের দিকে সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
 
অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, এখন আর করার আসলে কিছু নেই। প্রকৃতিই ভরসা। তবে এজন্য ১৫ বছরের মতো সময় লাগবে। এতো দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে মাছের। দুর্ঘটনা

এড়াতে জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি যোগ করেন তিনি।
 
নৌযান এবং নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক খবিরুল হক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সুন্দরবনের আশপাশ দিয়ে ট্যাঙ্কার চলাচল বন্ধ করতে হবে। ডাবল বটম ভেসেল তৈরি করতে হবে। এছাড়া কোয়ালিটি ট্রান্সপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে।
 
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান ও স্থপতি ইকবাল হাবীব।

উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী জাহাজ ডুবে যায়। ফলে প্রায় ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে ৩ লাখ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়ে। এতে এখন পর্যন্ত কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।