দিনাজপুর: দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার নাফানগর ইউনিয়নের নাফানগর গ্রামের এক সময়ের দরিদ্র কৃষক করিমুল হক।
মাত্র দেড় একর জমিতে হাইব্রিড জাতের হাইগ্রিন লাউ আগাম আবাদ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিরুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও তাদের পরামর্শে মাত্র দুই মাসে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে হাইব্রিড হাইগ্রিন জাতের লাউ আবাদ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন।
কৃষক করিমুল হক জানান, অভাবের সংসার ছিল তার। কিভাবে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা যায় ও নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায় সে বিষয়ে তিনি ও তার স্ত্রী মোছা. শাহেরা খাতুন বোচাগঞ্জ কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন। তাদের পরামর্শে তারা অল্প জমিতে অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ জন্য তারা প্রথমে মেটাল কোম্পানির কাছ থেকে বিভিন্ন হাইব্রিড বীজ উৎপাদন করার প্রশিক্ষণ নেন। মেটাল কোম্পানি থেকে টমেটো, বেগুন, শশা, করলা ও লাউ হাইব্রিড বীজ উৎপাদন প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীকালে তারা নিজেরাই বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের বীজ উৎপাদন করেন।
নিজের উৎপাদিত হাইব্রিড বীজ দিয়ে দুই মাস আগে দেড় একর জমিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাম লাউ চাষ শুরু করেন। দেড় একর জমিতে তার লাউ চাষ বাবদ মোট খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা।
করিমুলের লাউ বাগানে এবার প্রায় ১১ হাজার লাউ ধরেছে যার প্রতিটি ১২ টাকা দামে তিনি বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে তা থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন।
খরচ বাদে মাত্র দুই মাসে তিনি এক লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছেন। যা অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে সম্ভব হতো না। একই জমিতে কৃষক করিমুল এখন হাইব্রিড জাতের করলা চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেন। অল্প সময়ে অধিক টাকা আয় করতে পেরে দারুন খুশি তিনি। করিমুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী শাহেরা খাতুনও স্বামীকে মাঠে সময় দেন। এমনকি শাহেরা নিজেই বিভিন্ন সবজির হাইব্রিড জাত উৎপাদন করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে স্বামীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম করিমুলের লাউ চাষ সম্পর্কে জানান, মেধা, শ্রম ও ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোনো কৃষকই তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। এ জন্য বোচাগঞ্জ কৃষি বিভাগ এলাকার কৃষকের যে কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন এবং এ অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ ও তা থেকে স্বল্প সময়ে দ্বিগুণ মুনাফা বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এদিকে, করিমুলের এই সাফল্য দেখে এই এলাকার অনেকেই সবজি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪