ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪
দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো

ঢাকা: সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সংসদীয় কমিটি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গার টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে এ  অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি টিএসপি সার উৎপাদনে ফসফরিক এসিড ব্যবহার না করেও কাঁচামাল ব্যবহারের হিসেবে দেখিয়েছে, ১১৮১ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন রক সালফার।

শুধু তাই নয়, টিএসপি উৎপাদনে যে রক সালফার ব্যবহার করা হয়েছে, তার গুণগত মানও সঠিক ছিলো না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৪৫ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার ৮শ’ ৯০ টাকা। এছাড়া ইউরিয়া সার কারখানা, শিল্পপ্লটে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে।

এসব নিয়ে কমিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
 
বুধবার (২৪ ডিসেবম্বর) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির ১৫তম বৈঠকে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন কমিটি সদস্যরা।   বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
 
এসব অভিযোগের বিষয়ে কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ড. রুস্তম আলী ফরাজী বাংলানিউজকে বলেছেন, সব জায়গাই অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভরে গেছে। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই এ অভিযোগ বেশি পাওয়া যায়। বিগত সময়ের অনিয়মগুলো এখন বেরিয়ে আসছে। পরবর্তীতে বর্তমান সময়ের অনিয়ম যে বের হবে না তার নিশ্চয়তা কি?।
 
তিনি বলেন, টিএসপি সার কারখানা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিন্মমানের রক ফসফেট ব্যবহার করেছে। অনিয়মের দায়ে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পূরণেও অনিয়ম করা হয়েছে। কেননা, বিসিআইসি মামলা না করে যে প্রতিষ্ঠান এলসি প্রদান করে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংককে ধরতে পারতো। তারা তা না করেই মামলা করেছে। এখন অর্থ আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে। আমরা বলেছি, যে করেই হোক এসব অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্সের ২০০৮-১০ সালের হিসাব বিবরণী তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মবর্হিভূত সার উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার না করেই খরচের খাতায় দেখিয়েছে এটা ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটি রক ফসফেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও গুণগত মান বজায় রাখেনি। এসব অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিসিআইসি’র পক্ষ থেকে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
 
তৃতীয় তদন্ত কমিটির ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বরের প্রতিবেদন অডিট অধিদফতরের মাধ্যমে সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে রক ফসফেট (৬৫ দশমিক ৫ বিপিএল ন্যূনতম) ব্যবহার না করে রক ফসফেট (৭১ শতাংশ বিপিএল ন্যূনতম) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯ হাজার ৫৩৮ টাকা। পরবর্তীতে বিসিআইসি’র প্রধান কার্যালয় থেকে ৪৫ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার ৮শ’ ৯০ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে টিএলএলসি (সরবরাহকারী) এবং এনএমসিআই’র (পিএসআই) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, মামলা চলমান থাকায় ক্ষতির টাকা আদায় করা যাচ্ছে না।
 
বৈঠকে আমদানিকৃত উচ্চমান রক ফসফেটের গুনগতমান ক্রয়াদেশ বিনির্দেশের সঙ্গে মিল না থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার অনুপযোগী রক ফসফেট জাহাজ থেকে খালাস করায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি দেখানো হয়েছে।
 
উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি অনধিক দুই মাসের মধ্যে আপত্তিকৃত টাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল দলিল দস্তাবেজ পরীক্ষা করে এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে অডিট অফিসের মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন  কমিটির পরবর্তী বৈঠকে দিতে বলেছে।
 
বৈঠকে সরকারের পক্ষে ইউরিয়া সার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কাজে অনিয়মিত বিভিন্ন ব্যয় অন্তর্ভূক্ত করে অতিরিক্ত ট্রেড গ্যাপ দাবি করায় সরকারের ৬ কোটি ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬শ’ ২০ টাকা ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি অনধিক ৩ মাসের মধ্যে প্রমাণ উপস্থাপন এবং ট্রেড গ্যাপ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ বিসিআইসি’র আয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করে।
 
শ্রম আইন লঙ্ঘনে ক্ষতি সাড়ে ৫ কোটি টাকা
এছাড়াও  শ্রম আইন লঙ্ঘন করে  টিএসপি কমপ্লেক্স, ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লি., ফেঞ্চুগঞ্জ, যমুনা ফার্টিলাইজার  কোং লি. তারাকান্দি, জামালপুর সার কারখানাগুলো অতিরিক্ত অধিকালভাতা প্রদান করেছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪শ’ ৬৫ টাকা। এর বাইরে উৎসাহ বোনাস স্কিম নীতিমালা বহির্ভূত বোনাস প্রদান করায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৬১৮ টাকা।
 
প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষতি মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি ৬০ ঘণ্টার অধিক সময় যে সকল কর্মচারী অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণ করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি যে সকল কর্মকর্তা এসব টাকা প্রদানের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে বিষয়টি কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করে।
 
শিল্পপ্লটে হোল্ডারদের খাছে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষতি ৬ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৪০ টাকা। এর মধ্যে শিল্পপ্লট হোল্ডারদের কাছ থেকে জমির কিস্তি, খাজনা ও সার্ভিস চার্জ বাবদ দীর্ঘদিনের অনাদায়ী ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার ১শ’ ৪৫ টাকা, প্লট বরাদ্দের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও সুদসহ বরাদ্দ মূল্য আদায় না করায় ১ কোটি  ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫শ’ ৬ টাকা  ক্ষতি  এবং স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণকারী/ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় না করায় রাজস্ব ক্ষতি ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪শ’ ৮৯ টাকা। এসব ক্ষতিপূরণ আদায়ে ৩০ দিন সময় বেধে দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

এসব ক্ষতিপূরণ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমাদান এবং জমাকৃত টাকার প্রমাণক জমা দিয়ে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে প্রমাণক দাখিল করার সুপারিশ করে কমিটি।  
 
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, মো. আফছারুল আমীন, মো. শামসুল হক টুকু, মো. রুস্তম আলী ফরাজী।
 
এছাড়া সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, অডিট বিভাগের কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।