ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অস্থিরতায় রাজনীতি, শঙ্কায় অর্থনীতি

উর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
অস্থিরতায় রাজনীতি, শঙ্কায় অর্থনীতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে রাজনীতিবিদরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। দেশে সহিংস রাজনীতির ফলে বহির্বিশ্বে ইমেজ সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থনীতি।

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা এমনই মত প্রকাশ করেছেন।   

তারা মনে করছেন প্রায় এক বছর স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও সম্প্রতি আবার রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর বড় শিকার হতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই।

অর্থনীতিবিদ, শ্রমিক নেতৃত্বেরও একই মত।

দেশের বড় রফতানি খাত পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিতকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা রফতানি খাতে বড় ধরনের সঙ্কটের সৃষ্টি করবে।  

তিনি বলেন, গত এক বছর আমরা অপেক্ষাকৃত শান্তিতেই ছিলাম। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমরা যে ক্ষতির শিকার হয়েছিলাম, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। ক্রেতারা আবার ফিরতে শুরু করছিলো। কিন্তু প্রায় পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব বিশৃঙ্খলা ঘটলো, তা আমাদের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেবে বলে যেসব ঘোষণা ও হুমকি ধমকি আসছে তাতে ব্যবসায়ীরা ভীত হয়ে উঠছেন বলেই মত এই ব্যবসায়ী নেতার।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও তারা দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না।

বিজিএমইএ’র হিসাব মতে দেশের হরতাল বা এ ধরনের কর্মসূচিতে গড়ে প্রতিদিন পোশাক শিল্পেই প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে অপপ্রচার চালায় বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। এতে পোশাক শিল্পে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে আবারও নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে, আশঙ্কা এই বিজিএমইএ নেতার।

বাংলানিউজের কথা হয় পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবীদ ড. জাহিদ সাত্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেই পড়বে।  
 
জাহিদ সাত্তার বলেন, ২০১৫ সালের শুরু থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি নানা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বকশিবাজারে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ তার জেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এমনটাই ধারনা করা যায়।

এর ফলে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নষ্ট হবে, যা হবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি, বলেন ড. জাহিদ সাত্তার।

তিনি বলেন, যেকোনো দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ পরিবেশে প্রভাব ফেলে। রাজনীতিকদের উচিত এসব বিষয়ে নজর রাখা।

দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজনীতিক দলগুলো তাদের দায়িত্বশীলতা কিছুতেই এড়াতে পারে না, মত এই অর্থনীতিবিদের।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে অন্যতম ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের শ্রমজীবী মানুষও। তাদের কাছে রাজনীতি অনেক সময় আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে। সে কথাই বলছিলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা রাজনীতি বোঝেন না। পেটের দায়ে কাজ করেন তারা। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে সর্বোচ্চ কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হয়। শিপমেন্ট বাতিল হয়, অর্ডার চলে যায় অন্য দেশে। বেতন-ভাতা বন্ধ হয় শ্রমিকদের, বিপদে পড়েন তারা। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে শেষ না করলে তার দায় নিতে হয় জনগণকে।

রাজনীতির পরিবেশ অস্থিতিশীল করে রাজনীতিকরা জাতির জন্য কোন দায়িত্বের পরিচয় দিচ্ছেন, তা আমি জানি না, মন্তব্য এই শ্রমিক নেতার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।