ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা’ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাকে অনিশ্চতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, যে মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যাবে, ঠিক ওই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা সে সম্ভাবনাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ আরও বাড়বে। যা কারও কাম্য নয়। আশা করি সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
 
বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে তিনি একথা বলেন।
 
আতিউর রহমান বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। তবে প্রথম চার মাসে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সংশয়ে ছিল। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিনিয়োগ ও অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বা রিজিলিয়েন্স সুবিদিত হলেও প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ধারা সুরক্ষার স্বার্থে বিরাজমান সংকট অবস্থা থেকে ত্বরিত উত্তরণ অতি জরুরি।
 
পুঁজিবাজার বিষয়ে গভর্নর বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধেও অব্যাহত থাকবে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আইনের অনুশাসন পরিপালনের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

একই সঙ্গে এ বাজারের কার্যক্রমে মুদ্রানীতি প্রোগ্রামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় তারল্য যোগন বজায় রাখা হয়েছে বলে জানান গভর্নর।

তিনি জানান, পুঁজিবাজারের সমর্থনে বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংক অব্যাহত রেখেছে।
 
এক প্রশ্নের জবাবে ড. আতিউর বলেন, পুঁজিবাজারে ৯০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক আগ বাড়িয়ে করেছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পুঁজিবাজারের জন্য যে ধরনের সহায়তা দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক তা অব্যাহত রাখবে।
 
তিনি বলেন, অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের সহায়তা দিতে কিছুদিন আগে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা করা হয়েছে। এর আওতায় ব্যবসায়ীরা ৫০০ কোটি টাকার উপরের খেলাপী ঋণ পুনঃগঠনে বিশেষ সহায়তা পাবে।
 
অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে, তাদের জন্যও বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ বিষয়ে বিআরপিডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে তাদের একটি রিবেট (ছাড়) দেওয়ার জন্য গাইডলাইন বা নীতিমালা তৈরির।
 
মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ব্যাপক মুদ্রা যোগানের প্রবৃদ্ধি সমগ্র অর্থবছরে ১৬.৫ শতাংশে পরিমিত রাখা হবে। বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধির মাত্রা ধরা হয়েছে ১৫.৫ শতাংশ। গত নভেম্বরে এ হার ছিল ১২.৭ শতাংশ। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের সুযোগও উন্মুক্ত থাকছে।
 
গভর্নর বলেন, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি অর্থবছর শুরুর ৭.৩৫ শতাংশ থেকে জুন ২০১৫ শেষে ৬.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীলভাবে নিম্নগামী থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬.৯৯ শতাংশে। তবে মূল্যস্ফীতির এই উপশম হয়েছে মূলত ভোক্তাপণ্য ঝুড়ির খাদ্যপণ্য অংশ থেকে। খাদ্য ও জ্বালানি বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। সরকারের ব্যাংক-বর্হিভূত অর্থায়ন যোগান বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেল খাতে ভর্তুকি ব্যয়ভার কমায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত মাত্রার অনেকটা নিচে রয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতির প্রক্ষেপিত মাত্রার চেয়ে কম থাকলেও তা ২০১৪ সালের শেষ প্রান্ত থেকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।