ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজকে খুলনা চেম্বার সভাপতি

সব কিছুই স্বাভাবিক, আবার স্বাভাবিক নয়

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
সব কিছুই স্বাভাবিক, আবার স্বাভাবিক নয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে জীবনযাত্রার সব কিছুই স্বাভাবিক, আবার স্বাভাবিকও নয়। আমরা দেখছি জীবনের প্রয়োজনে মানুষ সব কিছু উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছে।

খুলনার ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট খুলছেন। কল-কারখানার চাকাও ঘুরছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্বাভাবিক গতি নেই। সবখানেই একটা আতঙ্ক।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক। তিনি খুলনা বিভাগের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন খুলনা চেম্বারের তৃতীয়বারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশে গত মাসখানেক ধরে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। অতঙ্ক বাড়ছে। এতে ট্রাক চালকরা রাস্তায় নামতে চাচ্ছেন না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য তার স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে পড়ছে অর্থনৈতিকভাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে কাজী আমিন বলেন, টানা হরতাল-অবরোধ খুলনার ব্যবসায়ীরা মানছেন না। বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধের মধ্যেও তারা দোকান খোলা রাখছেন বলে দেখা যাচ্ছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্রেতা সমাগম নেই। মানুষ বাইরে বের হলেও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে না। তাদের মধ্যে পেট্রোল বোমা, ইট, পাথরের আতঙ্ক বিরাজ করছে।  

খুলনায় চেম্বারের অধীনে কতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুলনা চেম্বারের অধীনে দুই হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুই হাজারের বেশি রয়েছেন ব্যবসায়ীও। যার মধ্যে রয়েছে চিংড়ি ও পাট ব্যবসায়ীরাও।

তিনি জানান, মংলা বন্দরে আমদানি-রফতানি চলছে তবে স্বাভাবিক গতি নেই। এতে করে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

হরতাল অবরোধ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা হরতাল অবরোধকে ভালো চোখে দেখেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যে আঘাত আসে এমন কোনো কিছুই তাদের ভালো চোখে দেখার কথাও নয়। তাই আমরা মনে করি টানা এ ধরনের কর্মসূচি আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না।

কাজী আমিনুল হক মনে করেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনীতির ক্ষতি হয়, এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রয়োজনে বিকল্প কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে।

তবে কী এই বিকল্প কর্মসূচি? উত্তরে তিনি বলেন, বিরোধীদল কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের যদি দাবি থাকে তাহলে একদিন হরতাল বা অবরোধ করতে পারে। কিংবা মানববন্ধন এমনকি অনশন করে তাদের দাবি জানাতে পারে। কিন্তু টানা হরতাল-অবরোধ দিয়ে অর্থনীতি ধ্বংস করা, যে কোনো সচেতন মানুষেরই কাম্য নয়।  

হরতাল-অবরোধে খুলনায় কি সমস্যা কিংবা কেমন ক্ষতি হচ্ছে তা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, খুলনার মালামাল বাইরে নিয়ে যেতে কিংবা বাইরের মালামাল খুলনায় আনতে সমস্যা হচ্ছে। পেট্রোল বোমার আতঙ্কে ট্রাক বা গাড়ির চালকরা গাড়ি চালাতে পারছেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালাচ্ছেন কেউ কেউ। এতে হামলার শিকারও হচ্ছেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি খুলনায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় চলমান অবরোধ অব্যাহত থাকলে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে সব কিছুই স্বাভাবিক। বাণিজ্য মেলাও স্বাভাবিক নিয়মে হবে। বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেবে সরকার। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়তো হবে না।

দেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতালের মতো কর্মসূচি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে তিনি চলমান অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬  ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।